মানুষ হল সৃষ্টির সেরা জীব। আচরণ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে সমাজে ভালো মানুষ ও খারাপ মানুষ– এই দুই ধরনের মানুষ আছে। যুগে যুগে পৃথিবীতে ভালো ও খারাপ মানুষের সহাবস্থান ছিল। তবে সত্যিকারের ভালো মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে? | Who is the Best Man in the World? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের ইতিহাস, মানবতা ও নৈতিকতার আলোকে মানুষকে বিশ্লেষণ করতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সেই মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানবো যিনি মানবতার আদর্শ হিসেবে পরিচিত। তাই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে?
পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে বা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব কে এটা জানার পূর্বে ভালো মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব কাকে বলে এটা জানতে হবে। সাথে সাথে ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্য কি এটাও জানতে হবে। ভালো মানুষ কাকে বলে ও ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্য কি এটা জানার পর যে কেউ বলতে পারবে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে বা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব কে। তাহলে চলুন এখন ভালো মানুষ কাকে বলে জানা যাক।
ভালো মানুষ কাকে বলে?
যে মানুষ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, আল্লাহর সৃষ্টি জীব কে ভালোবাসে,
আল্লাহর হুকুম বা বিধিনিষেধ মেনে চলে, সৎ জীবন যাপন করে এবং যার মধ্যে কোনো হিংসা,
বিদ্বেষ, লোভ, লালসা ও ক্রোধ নেই এবং যিনি পরোপকারী ও পাপ মুক্ত জীবন যাপন করেন তাকে
পৃথিবীর ভালো মানুষ বা Best
man in the world বলা
হয়। এখন ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলো জানা যাক।
ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্য
ভালো মানুষের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে তুলে ধরা হলো। ভালো মানুষের এই বৈশিষ্ট্যগুলোই আপনাকে বলে দিবে
পৃথিবীর ভালো মানুষ কে বা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব কে। তাহলে এখন ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলো
নিয়ে আলোচনা করা যাক।
আল্লাহর প্রিয় বান্দা:
আল্লাহ তা'আলা মানুষকে শ্রেষ্ঠ করে সৃষ্টি করেছেন এবং সব থেকে
তিনি মানুষকে বেশি ভালোবাসেন। আবার মানুষের মধ্যে কিছু মানুষকে তিনি অধিক ভালোবাসেন।
অধিক ভালোবাসার মানুষের মধ্যে তিনি যাকে সবচেয়ে ভালোবাসেন তিনি হলেন সবচেয়ে ভালো
মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব এবং ঐ মানুষটি অবশ্যই তার প্রিয় বান্দা। আসলে মানুষ কর্মের
উপর ভিত্তি করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয় বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। আর আল্লাহর ঐ
প্রিয় বান্দাটি দুনিয়া ও আখেরাতে ভালো মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে আখ্যায়িত হয়।
সত্যবাদী:
সত্যবাদিতা ভালো মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানবের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী মানুষ সারা জীবনেও একটি মিথ্যা কথা বলে না। শত দুঃখ-কষ্ট
ও বিপদ-আপদের মধ্যেও তার মুখ দিয়ে কখনো মিথ্যা কথা বের হয় না কারণ তিনি এবং
সবাই জানেন মিথ্যা বলা মহাপাপ।
ধর্ম পরায়ণ:
ভালো মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব সবসময় ধর্ম পরায়ন হয়। একজন
ভালো মানুষ কখনো ধর্মের পথ থেকে একবিন্দুও সরে দাঁড়ায় না। তিনি সারাজীবন ধর্মীয়
অনুশাসন মেনে চলেন এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করে দেন। তার কাছে জীবনের
চেয়ে ধর্ম বড়।
ন্যায় পরায়ণ:
ভালো মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানবের কাছে সমাজের ছোট, বড়, ধনী ও
গরিব সবাই সমান। তিনি কোনো বিচার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন স্বজনপ্রীতি আশ্রয়
নেন না। সব সময় তিনি সঠিক বিচার করেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। এককথায়, একজন ভালো
মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব যা কিছু করেন ন্যায় পরায়ণতা সাথে করেন এবং যুগ যুগ ধরে তার
ন্যায় পরায়নতা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।
পরোপকারী:
একজন ভালো মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব সব সময় পরোপকারী হয়। তিনি
কখনো নিজের জীবনের কথা চিন্তা করেন না। তার সব সময় চিন্তা অন্যকে নিয়ে। তিনি নিজে
না খেয়ে অপরকে খাওয়ান এবং নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে অপরকে সুখী করেন। তিনি কোনদিন
কারো মনে কষ্ট দেন না বরং নিজে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করেন। তার সব সময় চিন্তা ভাবনা
থাকে তিনি কিভাবে অপরকে উপকার করবেন, কিভাবে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কে ভালোবাসবেন
এবং কিভাবে মানুষকে বিপদ মুক্ত করবেন। সাধারণ মানুষের চিন্তা ভাবনা থাকে কিভাবে বাড়ি
করবে, গাড়ি করবে ও সুখী জীবন যাপন করবে কিন্তু ভালো মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব এর একটাই
চিন্তা ভাবনা থাকে যে তিনি কিভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করবেন এবং মানুষের উপকার করবেন।
হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ও ক্রোধ মুক্ত:
যার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ও ক্রোধ থাকে তিনি কখনো
ভালো মানুষ হতে পারেন না। আর ভালো মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব এর মধ্যে এগুলো জন্মগতভাবে
থাকেনা কিংবা থাকলেও তিনি এগুলো গলাটিপে হত্যা করে ফেলেন কারণ তিনি ভালোভাবে জানেন
যে এগুলো আল্লাহতালা কখনো পছন্দ করেন না। তাই এগুলো তাহার মধ্যে থাকলে তিনি কখনো ভালো
মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব হতে পারবেন না।
দুনিয়ার মোহ মুক্ত:
ভালো মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব দুনিয়ার অর্থ-সম্পদ বাড়ি-গাড়ি
ও নারীর মোহ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থাকে। সব সময় তার চিন্তা থাকে আল্লাহ তাআলাকে
কেন্দ্র করে। শত বিপদের মধ্যেও তিনি নিজের সুখের জন্য কোন অসৎ পথ অবলম্বন করেন না।
তিনি মানুষ বাদে দুনিয়ার কোন কিছু নিয়ে ভাবেন না। তবে দুনিয়ার মানুষের মঙ্গলের জন্য
তিনি সব সময় ভাবেন। তার একটাই ভাবনা যে সারা দুনিয়ার মানুষকে তিনি কিভাবে ইহকালে
ও পরকালে বিপদ মুক্ত করবেন।
বিশ্বাসী:
বিশ্বাস ভালো মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব এর অমূল্য সম্পদ। তিনি
আল্লাহকে কোন দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়া এক বাক্যে বিশ্বাস করেন এবং তার উপর পুরোপুরি ঈমান
আনেন। তিনি মানুষকে বিশ্বাস করেন এবং সব মানুষও তাকে বিশ্বাস করে। সমাজের সব মানুষ
ভালো মানুষ কে বিশ্বাসী বলে আখ্যায়িত করেন। তার এই বিশ্বাস নামক চারিত্রিক গুণাবলী
অপরকে বিশ্বাসী গুণ অর্জন করতে অনুপ্রেরণা যোগায়।
আল্লাহর অনুগত:
একজন ভাল মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব সব সময় আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ
মেনে চলেন। আল্লাহর হুকুমের বাইরে তিনি কখনো কিছু করেন না। তার কোন বিপদ আপদ আসলে মানুষের
কাছে নয় বরং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করেন। আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্টি হন এমন কাজ
তিনি জীবনে করেন না। এক কথায়, কাজে-কর্মে কথা-বার্তায় চাল-চলনে ও আচার-আচরণে তিনি
আল্লাহ তাআলার বিধি-নিষেধ মেনে চলেন।
সৎ জীবন যাপন:
ভালো মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সততা। এই সততা গুণটি বজায়
রাখার জন্য তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় কারণ পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষ অসৎ।
এই অসৎ মানুষের সাথে তাল মিলাতে যেয়ে একজন ভালো মানুষ বা সৎ মানুষকে প্রতি পদে পদে
সমস্যায় পড়তে হয়। এরপরও একজন ভালো মানুষ বিন্দুমাত্র তার সততা নিয়ে বিচলিত হয় না।
শত দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটন থাকার সত্বেও পৃথিবীতে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত
তিনি সৎ জীবন-যাপন করেন।
ধর্ম প্রচারে অবিচল:
একজন ভালো মানুষ কখনো তার ধর্মের উপর আঘাত সহ্য করতে পারেন
না। সারা জীবন তিনি ধর্ম প্রচারে নিবেদিত থাকেন। ধর্ম প্রচার করতে যেয়ে তাকে অনেক দুঃখ
কষ্ট ভোগ করতে হয়। তারপরেও তিনি তার জীবন দিয়ে হলেও ধর্ম প্রচারের কাজ এগিয়ে নিয়ে
যান এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তার নিজের ধর্ম প্রচারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান।
পাপ মুক্ত:
একজন ভালো মানুষ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে নিষ্পাপ হয়ে এবং
পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ও নিষ্পাপ হয়ে। পৃথিবীর রঙ্গের মেলার কোন পাপ-পঙ্কিলতা
তাকে স্পর্শ করতে পারে না। তিনি পাপ কাজ থেকে সবসময় দূরে থাকেন কারণ তার মনের
সব সময় আল্লাহ ভীতি জাগ্রত থাকে। সুতরাং একজন ভালো মানুষ বা শ্রেষ্ঠ মানব কখনো পাপ
কাজ করেন না কিংবা কোনো পাপ কাজ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। ফলে তিনি পৃথিবী থেকে পাপ
মুক্ত ভাবে বিদায় নেন।
পড়তে পারেনঃ
Who is the Best Man in the World?
হযরত মুহাম্মদ সা:
উপরের বৈশিষ্ট গুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে এই বৈশিষ্ট্যগুলো
পৃথিবীতে শুধুমাত্র একজন মানুষের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। আর তিনি হলেন আমাদের প্রিয়
নবী, গোটা মুসলিম জাহানের কান্ডারী এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দোস্ত হযরত মুহাম্মদ
সা:। তাই বৈশিষ্ট্য গুলির উপর ভিত্তি করে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে হযরত মুহাম্মদ
সা: পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ বা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। এছাড়া ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে
দুনিয়ার বিখ্যাত জ্ঞানী-গুণী মানুষ হযরত মুহাম্মদ সা: কে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ
বা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
স্যার জর্জ বার্নার্ড শ, থমাস কার্লাইল ‘হিরোস, মহাত্মা গান্ধী,
ডঃ উইলিয়াম ড্রেপার, আলফানসো দ্য লে মার্টিনি, মাইকেল এইচ হার্ট, বিশ্বখ্যাত বক্তা
অ্যাডমন্ড বার্ক ও আমেরিকার প্রখ্যাত মনসমীক্ষক জুলে মাসারম্যান হযরত মুহাম্মদ সা:
কে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ বা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব বা Best man in the
world
বলে অভিহিত করেছেন।
এই ভালো মানুষটি যিনি মুসলমানদের ইহকাল ও পরকালের নেতা, বিপদের
বন্ধু ও আল্লাহর দোস্ত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশে ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার
পিতার নাম আব্দুল্লাহ, মাতার নাম আমিনা এবং দুধ মাতার নাম হালিমা। তার জন্মের ছয় মাস
পূর্বে তার পিতা মারা যান এবং তার জন্মের ৬ বছর পরে তার মাতা মারা যান। ফলে তিনি পিতাহারা
ও মাতাহারা হয়ে সম্পূর্ণ ইয়াতিম হয়ে যান। প্রথমে তার দাদা আবদুল মোত্তালিব এবং পরে
চাচা আবু তালিব তাকে লালন পালন করে শৈশব থেকে বড় করে তোলেন।
অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে হযরত মুহাম্মদ সা: তার শৈশব কাল
অতিবাহিত করেন। ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়স্ক ধনী নারী বিবি খাদিজা রাঃ এর সাথে তিনি
বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পরে খাদিজা রাঃ এর সমস্ত সম্পত্তি তিনি গরীব দুঃখীদের
মাঝে বিলিয়ে দেন। খাদিজা রাঃ ছাড়া তার অন্যান্য স্ত্রীগণ হলেন- খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ,
সাওদা বিনতে জামআ, আয়িশা, হাফসা বিনতে উমর, জয়নব বিনতে খুযায়মা, উম্মে সালামা হিন্দ
বিনতু আবি উমাইয়া, জয়নব বিনতে জাহশ, রামালাহ বিনতে আবি সুফিয়ান, রায়হানা বিনতে
জায়েদ, সাফিয়া বিনতে হুওয়াই, মারিয়া আল-কিবতিয়া। তার সন্তানরা হলেন- কাসিম, আবদুল্লাহ,
ইবরাহিম, জয়নব, রুকাইয়াহ, উম্মে কুলসুম,ও ফাতিমা। হাসান, হুসাইন ও মুহসিন ছিলেন তার
নাতি এবং জয়নব ও উম্মে কুলসুম ছিলেন তার নাতনি। হযরত আলী ও হযরত উসমান ছিলেন তার জামাতা
এবং হযরত আবু বকর ও হযরত উমর ছিলেন তার শ্বশুর।
ইসলামের ইতিহাসের আলোকে ধর্মীয় জীবনে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাই সালাম ছিলেন এক অসাধারণ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইসলাম প্রচার করতে যেয়ে অন্য কোন নবী
ও রাসূল কে এত কষ্ট অত্যাচার সহ্য করতে হয়নি। জীবনের প্রতি পদে পদে তিনি বাধা প্রাপ্ত
হয়েছেন। একমাত্র ইসলাম প্রচারের কারণেই তার মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করতে
হয়েছে। মূলত ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়াত প্রাপ্ত হন এবং হীরার পর্বতের গুহায়
তার উপর প্রথম ওহী নাযিল হয়। তার উপর ওহী নাযিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই
হেরা পর্বতের গুহায় গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। ওহী নাযিল হওয়ার পর তিনি প্রকাশ্যভাবে
ইসলাম প্রচার শুরু করেন।
ইসলাম প্রচার শুরু করার পর কাফেররা তার উপর নানাভাবে অত্যাচার-নিপীড়ন
শুরু করে। এমনকি এক যুদ্ধে কাফেররা তাকে আঘাত করে তার এক দাঁত ভেঙে দেয় এবং সেই সময়
মুমূর্ষ অবস্থায় তিনি একটি খাদে পড়ে ছিলেন। এছাড়া তায়েফের ময়দানে কাফেররা তাকে
পাথর নিক্ষেপ করে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছিলেন। এরপরও তিনি ধর্ম প্রচারের পর থেকে একবিন্দুও
সরে আসেনি বরং শুধুমাত্র সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
এক সময় তিনি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে মেরাজ গমন
করেন। মেরাজে যেয়ে তিনি বেহেশত ও দোযখ স্বচক্ষে দেখেন এবং অনেক নবী ও রাসূলের সাথে
তিনি সাক্ষাৎ করেন। মেরাজ থেকে ফেরার সময় আল্লাহ রব্বুল আলামীনের নিকট থেকে তার উম্মতদের
জন্য পুরস্কার হিসাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে আসেন। সেই থেকে গোটা মুসলমান
জাতির উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়েছে।
অন্য কোন নবী রাসুলের জীবনীর সাথে হযরত মুহাম্মদ সা:
এর জীবনী কখনো মিলবে না কারণ ইসলাম প্রচার করতে যেয়ে অন্য নবী রাসুলের এতো দুঃখ কষ্ট
জীবনে সহ্য করতে হয়নি। এদিক থেকে বিবেচনা করলে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ বা
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব।
এছাড়া আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ সা: কে দোস্ত হিসেবে অভিহিত
করেন। তিনি তাকে ছাড়া অন্য কোন মানুষকে এই উপাধি দেননি কারণ একমাত্র তিনি আল্লাহ তায়ালার
সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিলেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর নামের সাথে হযরত মুহাম্মদ
সা: এর নাম জড়িত। তাই কোরআন ও হাদিসের আলোকে এবং তার অসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের
কারণে হযরত মুহাম্মদ সা: যে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ বা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব একথা
সবাইকে এক বাক্যে মেনে নিতে হবে
পরিশেষে বলা যায়, কোরআন, হাদীস, ইতিহাস, নৈতিকতা ও মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে যদি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষের সন্ধান করা হয় তাহলে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নামই সর্বপ্রথম আসে। তাঁর চরিত্র, জীবনাদর্শ ও মানবকল্যাণে অসামান্য অবদান বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। এই আর্টিকেলে বিভিন্ন যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে যা তাঁকে মানবতার শ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। অতএব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তিনি ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব এবং পৃথিবীর সর্বোত্তম মানুষ হিসেবে বিবেচিত এতে কোন সন্দেহ নেই। যাইহোক এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পেরেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে? | Who is the Best Man in the World? এই বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে তা কমেন্টে শেয়ার করুন।
রিলেটেড পোস্টসঃ
আর্টিকেলটি ভাল লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমার ব্লগটি পরিদর্শনের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।