বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগীরা হাত-পা ব্যথার কারণে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু তারা জানেন না যে তাদের হাতের কাছে আছে হাত-পা ব্যথার মহৌষধ এবং উচ্চ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি সুপারফুড। কিন্তু কি সেই মহৌষধ ও সুপারফুড? হ্যা, এটি সজনে পাতা ছাড়া আর কিছুই না। সজনে পাতা একটি অলৌকিক সুপারফুড যার উপকারিতা জানলে যে কেউ অবাক হয়ে যাবে। আজ আমি এই আর্টিকেলে সজনে পাতার উপকারিতা গুলো আপনার সামনে তুলে ধরব। আপনি যদি সজনে পাতার জাদুকরী উপকারিতা জানেন তাহলে অন্যদের মত আপনিও অবাক হয়ে যাবেন। চলুন তাহলে এখন সজনে পাতার অবাক করা উপকারিতা জেনে নেই।
সজনে পাতার উপকারিতা
সজনে পাতা পুষ্টির ডিনামাইট ও নিউট্রিশাশ্চ সুফারফুড। এতে
আছে কমলা লেবুর চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে ৪ গুণ
বেশি ক্যালসিয়াম, ডিমের চেয়ে ২ গুণ বেশি প্রোটিন, গাজরের চেয়ে ৪ গুণ বেশি
ভিটামিন এ, কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পটাশিয়াম ও পালংশাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রণ। এছাড়া এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক
ইত্যাদি। এই সজনে পাতা ৩০০ টির বেশি রোগের জন্য প্রচণ্ড উপকারী। বিশেষভাবে ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য এটা জাদুকরী মহাঔষধ। এখন জেনে নেওয়া যাক সজনে পাতা মানুষকে কোন
কোন মারাত্মক রোগ থেকে চিরতরে মুক্তি দিতে পারে।
১। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে হাত-পায়ের ব্যথা সম্পূর্ণভাবে
নিরাময় করে।
২। কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৩। এ্যানেমিয়া দূর করে।
৪। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
৫। ওজন কমায়।
৬। বার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর করে।
৭। ক্যান্সার নিরাময় করে।
৮। যকৃত ও কিডনী সুস্থ্য রাখে।
৯। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
১০। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
১১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১২ খাবারের রুচি বৃদ্ধি করে।
১৩। অনন্ধত্ব দূর করে।
১৪। হার্ট ভাল রাখে।
১৫। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
কাঁচা সজনে পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রচণ্ড উপকারী। এটা
ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়। সজনে পাতায় বিদ্যমান ক্লোরোজেনিক
অ্যাসিড রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে। এছাড়া এর মধ্যের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি
এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাপক সাহায্য করে।
শুধুমাত্র এই নয়, কাঁচা সজনে পাতায় থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যা
শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। এতে
উপস্থিত বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ও খনিজ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ
করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন ঔষধ না খেয়ে ঔষধের পরিবর্তে কাঁচা সজনে পাতা খাওয়া
উচিত। কাঁচা সজনে পাতা খেলে যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এর অনেক দৃষ্টান্ত আছে।
ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা/সজনে পাতার রূপচর্চা
ত্বকের যত্নে সজনে পাতা এক অসাধারণ টোটকা। সজনে পাতায় বিদ্যমান
বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল
ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বককে উজ্জ্বল করে, ত্বকের দাগ বা ছোপ দূর করে, ত্বকের
বলিরেখা কমায়, ত্বকের লোমকূপ ছিদ্র হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে এবং ত্বকের ব্রণ দূর
করে ত্বককে যাবতীয় সমস্যা থেকে রক্ষা করে। এখন দেখে নিন কিভাবে সজনে পাতা ত্বকে ব্যবহার
করবেন।
ত্বকের যত্নে সজনে পাতা ব্যবহার করতে সজনে পাতা দিয়ে একটি
ফেসপ্যাক বানিয়ে ফেলতে পারেন। আর এই ফেসপ্যাক বানাতে ১ চা চামচ সজনে পাতা গুড়োর সাথে
১ চা চামচ মধু ও গোলাপজল মিশিয়ে আধা চা চামচ লেবুর রস যোগ করুন। তারপর মিশ্রণটি পেস্টের
মত বানিয়ে ফেলুন। তৈরি হয়ে গেল সজনে পাতার ফেসপ্যাক। এখন এই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে
১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন এই
প্যাক ব্যবহারের ফলে আপনার মুখের ত্বক হবে উজ্জ্বল ও কোমল।
পড়তে পারেনঃ
ওজন কমাতে সজনে পাতা
অতিরিক্ত ওজন মানে রোগের বাসা। তাই শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর
জন্য কত কি খায়! কিন্তু কেউ জানে না সজনে পাতা ওজন কমানোর জন্য মহাঔষধ। সজনে পাতা
হল ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর খনি যা ওজন কমানোর জন্য প্রচণ্ড কার্যকারী।
তাই শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সজনে পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো চা পাতির মত করে রাখুন। এরপর যখন
আপনার চা খাওয়ার প্রয়োজন হবে তখন চা এর পরিবর্তে সজনে পাতার চা খান। এতে ওজনতো কমবেই
সাথে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
চুলের যত্নে সজনে পাতা
চুলের যত্নে সজনে পাতা খুব উপকারী। সজনে পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, হাইড্রেটিং
ও ডিটক্সিফাইং উপাদান, ভিটামিন ও প্রোটিন চুলকে জীবন দান করে। মূলত সজনে
পাতা চুল লম্বা করে, চুলের রুক্ষতা দূর করে, চুলকে আগা ফাটার সমস্যা থেকে
বাঁচায়, চুল মজবুত ও শক্ত করে। এখন জেনে নিন চুলের যত্নে কিভাবে সজনে পাতা
ব্যবহার করবেন।
চুলকে সুস্থ রাখতে সজনে পাতা ব্যবহার করার জন্য ২ চা
চামচ সজনে পাতার গুঁড়োর সাথে ১ চা চামচ মেহেদির গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এরপর এর সঙ্গে টকদই
মিশিয়ে ও কয়েক ফোটা ক্যাস্টর অয়েলও যোগ করে দিন। এখন উপাদানগুলো সুন্দরভাবে একসাথে
মিশিয়ে চুলের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগান। আধা ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
এই প্যাকটি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করলে নিশ্চিত ভাল ফলাফল পাবেন।
সজনে পাতার গুড়া করার নিয়ম
সজনে পাতার গুড়া করার জন্য প্রথমে সজনে গাছ থেকে তরতাজা সজনে
ডাল সংগ্রহ করুন। এরপর ডাল থেকে পাতা সংগ্রহ করে নিন। পাতার সাথে যেন ছোট ডালপালা না
থাকে। এখন সজনে পাতাগুলো ভালভাবে ধুয়ে স্টিলের পাত্রে করে রোদে শুকাতে দিন। পাতাগুলো
রোদে শুকিয়ে মচমচে হয়ে গেলে ব্লেন্ডারের দ্বারা গুড়া করে একটি বয়ামে ঢুকিয়ে রাখুন।
রোদের বিকল্প হিসাবে গ্যাসের চুলাতে স্টিলের পাত্র দিয়ে এবং ঐ পাত্রের মধ্যে সজনে
পাতা দিয়ে শুকিয়ে নিতে পারেন।
সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার সবচেয়ে উত্তম উপায় হল সজনে পাতার
গুড়া দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া। এছাড়া সজনে পাতার গুড়া সাথে মুধু মিশিয়ে পুরিয়া তৈরি
করে খাওয়া যায়। সজনে পাতার পুরিয়া তৈরির জন্য সজনে পাতার গুড়ার সাথে প্রয়োজন মত মধু
মিশিয়ে আঠালো তৈরী করে ফেলুন। এরপর এই আঠালো সজনে পাতা দিয়ে ছোট ছোট পুরিয়া তৈরি করে
রোদে শুকাতে দিন। পুরিয়াগুলো ভালভাবে শুকানোর পর বোতলে রেখে দিন। এই বোতলে থেকে সকাল
ও সন্ধ্যায় দুটি পুরিয়া নিয়ে ট্যাবলেটের মত পানি দিয়ে খেয়ে ফেলুন।
সজনে পাতার অপকারিতা কি?
সজনে পাতা খাওয়ার তেমন কোন অপকারিতা নেই। তবে সজনে পাতা খেলে
ব্লাড প্রেসার কমে যায়। এছাড়া সজনে পাতা খেলে ক্ষুধা কমে যায়, পেটে গ্যাস হয়
এমনকি ডায়রিয়া হতে পারে। তাই লো প্রেসারের রোগীরা কখনও সজনে পাতা খাবেন না ও না ধুয়ে
কেউ সজনে পাতা খাবেন না কারণ সজনে পাতায় ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে সজনে পাতা একটি অলৌকিক সুপারফুড। এটা ৩০০টিরও বেশি রোগের মহাঔষধ। এর গুণের কোন তুলনা নেই। আপনি এই আর্টিকেল থেকে সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। এখন যদি আপনি ডায়াবেটিস রোগী হন এবং হাত বা পায়ের গিটে গিটে ব্যথায় ভোগেন তাহলে আজই সজনে পাতা খাওয়া শুরু করে দিন। আশা করি চমৎকার ফল পাবেন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এরকম আরও সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল পড়তে সবসময় আমার ব্লগ সাইটের সাথেই থাকুন।