Type Here to Get Search Results !

কিডনি রোগের লক্ষণ জানুন, আগেভাগেই প্রতিকার নিন!

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার,কিডনি রোগের লক্ষণ,কিডনি,কিডনি রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার,কিডনি রোগের ঔষধের নাম

কিডনি শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যার প্রধান কাজ হল রক্ত থেকে টক্সিন শোষণ করে মূত্রের মাধ্যমে তা শরীর থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু যখন কিডনিতে সমস্যা বা ইনফেকশন হয় তখন এটি আর ঠিকমতো কাজ করে না। কিডনির এ অবস্থাকে কিডনি রোগ বলে। বর্তমানে কিডনি রোগ একটি নিরব ঘাতক। দিন দিন এ রোগ বেড়ে চলেছে। যাইহোক, ৭০% থেকে ৮০% কিডনি নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এর কোন স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তাই কিডনি রোগ থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে বছরে কমপক্ষে একবার কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত। তাছাড়া, নিরব ঘাতক থেকে রক্ষা পেতে কিডনি রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে সবারই সচেতন হওয়া উচিত।

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কিডনি রোগের উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ আছে যা দেখে বুঝা যায় কেউ কিডনি রোগে আক্রান্ত কিনা। নিচের লক্ষণগুলো যদি কারো মধ্যে দেখা থাকে তাহলে নিশ্চিত সে কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং এই লক্ষণগুলো কারো মধ্যে প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে তার কিডনি পরীক্ষা করে দ্রুত কিডনি রোগ থেকে প্রতিকারের উপায় খুঁজতে হবে। বিশেষভাবে নিচের লক্ষণগুলো কারো মধ্যে দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ তার কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। এখন কিডনি রোগের লক্ষণগুলো জেনে নিন।

কিডনি রোগের লক্ষণ

 স্বাভাবিকের তুলনায় প্রসাব কমে যাওয়া।

মুখমণ্ডল সহ সমস্ত শরীর ফুলে যাওয়া।

তলপেট সহ কোমরের দুই পাশে ব্যথা করা

প্রস্রাব লাল হওয়া কিংবা প্রস্রাব দিয়ে রক্ত পড়া।

উচ্চ রক্তচাপ।

ক্ষুধা কম লাগা

প্রচন্ড ক্লান্তি লাগা

ঘুমের পরিমাণ কমে যাওয়া।

বমি বমি লাগা।

১০ সমস্ত শরীরে চুলকানি হওয়া

১১ শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া

১২ সব সময় শীত শীত অনুভব হওয়া।

কিডনি রোগের কারণ

কোন কারণ ছাড়া এমনি এমনিতে কিডনি রোগ হয় না। কিডনি রোগের নির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে যেসব কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিংবা সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যায় এখন সেই কারণগুলো জানা যাক।

নেফ্রাইটিস। এই নেফ্রাইটিস এর কারণে ৪৬% কিডনি নষ্ট হয়ে যায়।

ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসের কারণে ৩৮% কিডনি নষ্ট হয়ে

উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপের কারণে ১১% কিডনি নষ্ট হয়ে যায়।

অনেকক্ষণ ধরে প্রস্রাব আটকে রাখা।

পরিবারের বংশ বংশানুক্রমে কিডনি রোগ থাকা।

পানি কম খাওয়া।

মাত্রাতিরিক্ত ব্যথার ওষুধ সেবন করা।

অনিয়মিত ওষুধ সেবন করা।

অতিরিক্ত মদ পান করা।

১০ পাতে কাঁচা লবণ বেশি খাওয়া।

১১ রাত জাগা।

১২ কাজের পর বিশ্রাম না নেওয়া।

১৩ কোনো ইনফেকশন দ্রুত চিকিৎসা না করা।

১৪ অতিরিক্ত কোমল পানীয় পান করা।

১৫ ধূমপান করা।

কিডনি রোগের প্রতিকার

কিছু কিছু রোগ ছাড়া প্রায় প্রতিটি রোগের প্রতিকার আছে। তেমনি কিডনি রোগের প্রতিকার আছে। তবে কিডনি যদি একেবারে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে নতুন কিডনি সংযোজনের মাধ্যমে প্রতিকার করতে হয়। কিন্তু কিডনি যদি সম্পূর্ণ নষ্ট না হয় বা কিডনিতে ইনফেকশন হয় তাহলে ওষুধের মাধ্যমে কিংবা ঘরোয়া চিকিৎসা মাধ্যমে কিডনি রোগ প্রতিকার করা যায়। তবে এ বিষয়ে কিডনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির বর্তমান অবস্থা জানতে হবে। যদি কারো মধ্যে কিডনি রোগের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় তাহলে কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে কিডনি রোগের চিকিৎসা নিতে হবে।

পড়তে পারেনঃ

কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

ডাক্তারি ওষুধ ছাড়াও ঘরোয়া উপায়ে বাড়িতে কিডনি রোগের চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু অনেকে জানে না কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা কি। নিচে কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা উল্লেখ করা হলো।

ধনেপাতা:

কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা মধ্যে ধনেপাতা একটি জাদুকরী উপাদান। কিডনি ইনফেকশনের ক্ষেত্রে ধনেপাতা প্রচন্ড উপকারী। কিডনি ইনফেকশন সারাতে একটি প্যানে এক গ্লাস পানি দিয়ে তার মধ্যে এক মুঠো ধনেপাতা দিন। এখন প্যানে তাপ দিয়ে ১০ মিনিট ধরে ধনেপাতা সিদ্ধ করুন। পানি ঠান্ডা হওয়ার পর পানিটুকু ছেকে এখান থেকে এক কাপ পানি পান করুন। এভাবে নিয়মিত ধনে পাতা সিদ্ধ পানি পান করুন।

পানি:

কিডনি ইনফেকশনের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে পানি খাওয়া খুব জরুরি। পানির মাধ্যমে কিডনির মধ্য থেকে টক্সিন ও সংক্রামক উপাদান বেরিয়ে যায়। তাই দৈনিক কমপক্ষে ২ লিটার বা ৮ গ্লাস পানি পান করুন।

আপেল:

কিডনি ইনফেকশনের জন্য আপেল খাওয়া খুব ভালো। আপেলের ভিতরে এসিড কিডনি এসিডের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলে কিডনিতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। কিডনি ইনফেকশন হলে কোমর ও পেটে ব্যথা হয়। আর আপেল খেলে এই ব্যাথা দূর হয়। তাই কিডনির ইনফেকশন দূর করতে প্রতিদিন কমপক্ষে একটি আপেল খান।

আদা:

আদা মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিডনি রোগের ইনফেকশন দূর করতে আদার জুড়ি নেই। আদার মধ্যে থাকা উপাদান ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। তাই নিয়মিত আদা চা খান কিংবা কয়েক টুকরো আদা চিবিয়ে খান। তবে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগীরা আদা খাবেন না।

রসুন:

কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার আরেকটি অন্যতম উপাদান হল রসুন। রসুনের মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাস উপাদান কিডনি ইনফেকশন দূর করে এবং কিডনির ব্যথা নিরাময় করে। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রসুন সংযুক্ত করুন। আর প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেতে পারলে কিডনি ইনফেকশন দূর করতে প্রচণ্ড কাজ করবে।

কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়

কিডনি একটি মরণঘাতী রোগ। একবার এই রোগে কেউ আক্রান্ত হলে এবং সময়মত রোগ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হলে কিডনি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় যার শেষ পরিণাম মৃত্যু। অথচ একটু সচেতন হলে এই প্রাণঘাতী কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এখন দেখে নিন কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়।

  রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

কোলেস্টেরল কমান

দৈনিক এক ঘণ্টা ব্যায়াম করুন।

পাতে কাঁচা লবণ এড়িয়ে চলুন।

সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।

ধূমপান বর্জন করুন।

অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন।

কোমল পানীয়কে না বলুন।

১০ ওজন কমিয়ে রাখুন।

উপসংহারে বলা যায় যে কিডনি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা। যেহেতু কিডনি নষ্ট হলে মানুষ বাচে না সেহেতু এর প্রতি সকলের সতর্ক থাকা উচিত। পাশাপাশি কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত। আশার কথা হল সময়মতো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসাই কিডনি সুস্থ রাখার একমাত্র চাবিকাঠি।

রিলেটেড পোস্টসঃ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.