Type Here to Get Search Results !

শক্তি ও পুষ্টির খনি খেজুর! উপকারিতা জানলে চমকে উঠবেন!

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা,খেজুর,আজওয়া খেজুর,খেজুর খাওয়ার উপকারিতা,দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত,খেজুরের উপকারিতা

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

খেজুর আল্লাহ তায়ালার অশেষ নিয়ামত। এটা পুষ্টিতে ভরপুর। মুসলমানদের জন্য খেজুর খাওয়া সুন্নত। তাই মুসলমানেরা সারাদিন রোজা পালন শেষে খেজুর দ্বারা ইফতারি করে। খেজুরের উপকারিতা লিখে শেষ করা যাবে না। খেজুর এনার্জির একটি চমৎকার উৎস। সুতরাং সারাদিন এনার্জি ধরে রাখতে রোজ সকালে প্রত‍্যেকের কয়েকটি খেজুর খাওয়া উচিত। নিয়মিত খেজুর খেলে অনেক মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছা হয়-

রোজ সকালে খেজুর খান,

মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পান।

আজ আমি আমার এই আর্টিকেলে খেজুরের উপকারিতা আপনার সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়েন তাহলে খেজুরের বিষ্ময়কর উপকারিতা জেনে আপনি অবাক খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাবেন। তাহলে চলুন এখন খেজুরের উপকারিতা গুলো জেনে নেই। তার পূর্বে খেজুরের মধ্যে কি কি পুষ্টি উপাদান আছে তা এক নজর জেনে নিন।

খেজুরের পুষ্টি উপাদান

মানুষের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান খেজুরের মধ্যে লুকিয়ে আছে। খেজুরে আছে ক্যালরি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন, ফাইবার, আয়রন, ফসফরাস, জিংক, খনিজ ইত্যাদি। নিয়মিত খেজুর খেলে এসব উপাদান মানুষের শরীরে প্রবেশ করে অনেক মারাত্মক রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এখন খেজুরের উপকারিতা জানা নেন।

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

খেজুর একটি সুস্বাদু ফল। অসাধারণ পুষ্টি উপাদানের কারণে প্রত্যেকের খেজুর খাওয়া উচিত। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ খেজুরের উপকারিতা না জেনে খেজুর খায়। যদি সবাই খেজুরের উপকারিতা জানতো তাহলে কেউ খেজুর না খেয়ে একদিনও থাকত না। তাই যারা খেজুরের উপকারিতা জানে না তারা এক নজরে দেখে নিন খেজুর মানব শরীরের জন্য কি কি উপকার করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে:

মিষ্টি খেলে সুগার বাড়ে এটা সত্য কথা। কিন্তু এমন একটা মিষ্টি আছে যা খেলে সুগার বাড়ে না। সেটি হল খেজুর।ডাক্তাররা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রতিদিন দুই-তিনটা খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেন। খেজুর খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে না বরং নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ডায়াবেটিস রোগীরা বেশি পরিমাণ খেজুর খাবে না কারণ খেজুর বেশি খেলে ক্ষতি হয়। তাই যদি ডায়াবেটিস রোগীদের মিষ্টি খেতে ইচ্ছা হয় তাহলে খেজুর খান।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

বর্তমান বিশ্বে ক্যানসার মহামারী আকার ধারণ করেছে। এই রোগের কোন মুক্তি নেই। কিন্তু ক্যান্সার কোষের প্রতিরোধোক ক্ষমতা লুকিয়ে আছে খেজুরের মধ্যে। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে নিয়মিত খেজুর খান।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:

ক্যান্সারের মতো আরেকটি মহামারী রোগ হলো হূদরোগ। এই হৃদরোগের কারণে প্রতিদিন অসংখ্য লোক মারা যায়। অথচ হাতের কাছে থাকা খেজুর হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে। খেজুরের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল যা রক্তের কোলেস্টেরল ও ট্রাই গ্লিসারাইড এর পরিমান নিয়ন্ত্রনে রাখে। নিয়মিত খেজুর খেলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে। সুতরাং, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত খেজুর খান।

ওজন কমায়:

খেজুর পজিটিভ ও নেগেটিভ পাওয়ার সমৃদ্ধ একটি ফল। খেজুর খেলে যেমন ওজন কমে তেমনি ওজন বাড়ে। খেজুর খেয়ে ওজন কমাতে চাইলে অল্প পরিমাণ খেজুর খেতে হবে। আর খেজুর খেয়ে ওজন বাড়াতে চাইলে বেশি পরিমাণ খেজুর খেতে হবে। খেজুরের মধ্যে বিদ্যমান ভিটামিন বি, ভিটামিন কে  রিবোফ্লাভিন শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়। ফলে ওজন কমে যায়। তাই খেজুর খেয়ে ওজন কমাতে দৈনিক এক থেকে দুটি খেজুর খান। আর ওজন বাড়াতে চাইলে দৈনিক ৪-৫টি করে খেজুর খান।

কোলেস্টেরল কমায়:

সব মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে কিন্তু খেজুর মিষ্টি হলেও এতে কোনো ফ্যাট নেই। নেই কোন কোলেস্টরল। খেজুরের মধ্যে থাকে ক্যাটাচিনস নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। তাই কোলেস্টেরল কমাতে নিয়মিত খেজুর খান।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:

আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেসব খাদ্য খাই প্রায় সবধরনের খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ও ফ্যাট থাকে যা উচ্চ রক্তচাপের মূল কারণ। খেজুরে কোন সোডিয়াম ও ফ্যাট নেই বরং এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা সোডিয়াম কমাতে সাহায্য করে। ফলে খেজুর খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে:

মানব শরীরে রক্তশূন্যতার কারণে বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা শরীর রক্তশূন্য হতে প্রতিরোধ করে এবং রক্ত পরিষ্কার করে। তাই রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে নিয়মিত খেজুর খান।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে:

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে খেজুর বিরাট ভূমিকা পালন করে। খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদান দুটি দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য কার্যকারী। এছাড়া খেজুর চোখের পেশির সংকোচন  প্রসারণ কমে যাওয়া রোধ করে। তাই দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে নিয়মিত খেজুর খান।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:

কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের মূল কারণ হল খাদ্যের মধ্যে ফাইবার এর অভাব। খেজুরের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে। তাই নিয়মিত খেজুর খেলে কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না কিম্বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলেও খেজুর খাওয়ার কারণে তা দূর হয়ে যায়।অতএব, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে নিয়মিত খেজুর খান।

ত্বক ও চুল সুন্দর করে:

খেজুরের মধ্যে বিদ্যমান ভিটামিন, আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুলের জন্য খুব কার্যকারী। নিয়মিত খেজুর খেলে ত্বক ঝলমলে ও সতেজ থাকে এবং চুল পড়া কমে যায় ও মাথায় নতুন চুল গজায়। তাই ত্বক ও চুলের যত্নে খেজুর খাওয়ার বিকল্প নেই।

এছাড়া খেজুর শরীরের যাবতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করেশক্তি বাড়ায়, হাড় মজবুত করে, স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করেপ্রসবকালীন জটিলতা কমায় ও যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

পড়তে পারেনঃ

খেজুর খাওয়ার নিয়ম

এতক্ষণ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা জানলেন। এখন কিভাবে খেজুর খেতে হয় তা জানেন।

 খেজুর যেকোনো সময় খেতে পারেন তবে সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়া উত্তম। এজন্য রাত্রে তিন-চারটি খেজুর ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে ঐ খেজুর খেয়ে নিন। সারাদিন শরীরে এনার্জির অভাব হবে না।

 রাত্রে ঘুমানোর আধাঘন্টা পূর্বে তিন-চারটে খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর দুধের সাথে মিশিয়ে ঐ তিন-চারটে খেজুর খেয়ে ঘুমাতে যান।

 ব্যায়ামের আধা ঘন্টা পূর্বে তিন-চারটি খেজুর খান। ব্যায়াম করার ফলে শরীরে ক্লান্তি আসবে না।

খেজুরের অপকারিতা

খেজুরের তেমন কোনো অপকারিতা নেই। এরপরেও কেউ অতিরিক্ত খেজুর খেলে মোটা হয়ে যায়। ডায়রিয়া রোগীদের খেজুর খেলে সমস্যা হয়। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খেজুর খাবেন না । আর যাদের শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি তারা খেজুর খাবেন না।

খেজুর সম্পর্কে আরো অজানা তথ্য

আজওয়া খেজুর

আজওয়া খেজুর মদিনার এক বিশেষ জাতের খেজুর। এর স্বাদ অন্যান্য খেজুর থেকে কিছুটি ভিন্ন। মূলত আজওয়া খেজুর অনন্য স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বিখ্যাত। এই খেজুর পুষ্টি, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এগুলো হৃদরোগকে উন্নত করে ও শক্তি বাড়ায়। এগুলোো একটি সুপারফুড হিসাবেও বিবেচিত। এই খেজুরগুলো তাদের অনন্য উপকরিতার জন্য ইসলামিক ঐতিহ্যে অত্যন্ত মূল্যবান।

আজওয়া খেজুরের উপকারিত

আজওয়া খেজুরের হৃদরোগের উন্নতি, হজমশক্তি ও শক্তি বৃদ্ধি সহ অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। এই খেজুরগুলো পুষ্টি, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। মূলত আজওয়া খেজুর কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে, মানুষকে সর্বদা সুস্থ রাখে, প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। অতএব, আজওয়া খেজুর শক্তির অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস।

দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত?

খেজুর অতিরিক্ত পুষ্টিকর একটি খাদ্য যাকে সুপারফুড বলা হয়। এধরনের পুষ্টিকর খাদ্য অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন‍্য ঝুকি। তাই ভাল ফলাফলের জন‍্য প্রতিদিন ৩-৫টি খাওয়া উত্তম। এর বেশি খেলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।

খেজুর খেলে কি ওজন বাড়ে?

হ্যাঁ, বেশি পরিমাণে খেজুর খেলে ওজন বাড়ে কারণ খেজুরে ক্যালোরি ও চিনির পরিমাণ অনেক বেশি। আর  ক্যালোরি ও চিনি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে ওজনতো বাড়বেই। আবার নিয়মিত অল্প পরিমাণে খেজুর খেলে ওজন কমে।

সেক্সে খেজুরের উপকারিতা

খেজুরে অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিনের মতো পুষ্টি থাকে যা হরমোন উৎপাদন এবং শক্তি বৃদ্ধি করে যৌনশক্তিকে উন্নত করতে পারে। মূলত, খেজুরের প্রাকৃতিক শর্করা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। আর শরীরের শক্তি বাড়লেতো যৌনশক্তি বৃদ্ধি পাবেই।

খেজুর খেলে কি মোটা হওয়া যায়?

হ্যাঁ, খেজুর বেশি খেলে আপনি মোটা হয়ে যাবেন এতে কোন সন্দেহ নেই কারণ খেজুরে পর্যাপ্ত ক‍্যালোরি ও সুগার থাকে যা মোটা হওয়ার বা ওজন বৃদ্ধির একমাত্র বাহক। তাই যদি আপনি মোটা হতে চান তাহলে সব বাদ দিয়ে বেশি বেশি খেজুর ও ছানার তৈরি মিষ্টি খান।

উপসংহারে বলা যায় যে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা মেটাতে এবং অনেক মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পেতে খেজুর খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। তাই সকলের খেজুরের উপকারিতা জানা উচিত। যদি কেউ নিয়মিত রোজ সকালে খালি পেটে তিন চারটা খেঁজুর খায় তাহলে সারাদিন তার শরীরে এনার্জির ঘাটতি হয় না এবং কাজকর্মে কোন ক্লান্তি আসে না। এই আর্টিকেল থেকে আপনি খুজুরের উপকারিতা ভালভাবে জেনেছেন। এখন থেকে প্রতিদিন সকালে তিন-চারটা খেজুর খান এবং স্ট্রোক ও হার্ট এট‍্যাক সহ মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পান। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না।

রিলেটেড পোস্টসঃ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.