আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ নিয়ামত হল কালোজিরা। কালোজিরার
উপকারিতার কথা লিখে শেষ করা যাবে না। কালোজিরার মধ্যে আল্লাহ তায়ালা মৃত্যু
ছাড়া সব রোগের প্রতিকার দিয়ে দিয়েছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন যে কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ঔষধ। তাই যদি
কেউ আল্লাহ ও রাসূলের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে কালোজিরা খায় তাহলে সে যেকোনো রোগ
থেকে মুক্তি পাবে ইনশাল্লাহ। আজ আমি এই আর্টিকেলে কালোজিরার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি খুব উপকৃত হবেন এবং কালোজিরা খেয়ে অনেক
মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। তবে কালোজিরার উপকারিতা আলোচনা করার পূর্বে
কালোজিরার মধ্যে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানা যাক।
কালোজিরার মধ্যে একশর বেশি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এর
মধ্যে আছে প্রোটিন,
ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১, ভিটামিন সি, লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ভিটামিন বি২, নিয়াসিন, ফোলাসিন, সেলেনিয়াম, নাইজেলোন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, কপার, জিংক, ফসফেট,
কার্বোহাইড্রেট, থাইমোকিনোন ইত্যাদি। এত বেশি পুষ্টি উপাদান অন্য কোন খাদ্যে নেই। এজন্য কালোজিরাকে
মৃত্যু বাদে সকল রোগের ঔষধ বলা হয়। এখন কালোজিরার
উপকারিতা দেখা যাক।
কালোজিরার উপকারিতা
মানব শরীরের জন্য কালোজিরা প্রচন্ড উপকারী। কালোজিরা
খাওয়ার ফলে মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কালোজিরার বড় বন্ধু হল মধু। এই মধুও খুব উপকারী। এদুটি উপাদান এক সাথে হলে তৈরি হয়ে যায় দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ
ঔষধ। তাছাড়া কালোজিরা থেকে তেলও তৈরি হয়। বর্তমান বাজারে
কালোজিরার ক্যাপসুল পাওয়া যাচ্ছে যার মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোটিন ও
হরমোন থাকে। তাই সব দিক থেকে বিচার বিবেচনা করে কালোজিরার উপকারিতা ভাষায় প্রকাশ করা
যায় না। এখন কালোজিরার বিস্ময়কর উপকারিতা
গুলো দেখা যাক।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য
যেসব উপাদান প্রয়োজন তার সবই কালোজিরার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। সুতরাং
কালোজিরা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুলাংশে বেড়ে যায়। ফলে শরীর যেকোন
রোগজীবাণু বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারে। তাই শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন সকালে এক চামচ কালোজিরা এবং এক চামচ মধু খান
এবং করোনাভাইরাস এর মতো মারাত্মক ভাইরাস থেকে নিজকে রক্ষা করুন।
হার্ট ভালো রাখে
হার্টের রোগীদের জন্য কালোজিরার তেল একটি
মহাষৌধ। তাই যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের নিয়মিত কালোজিরা খেতে হবে এবং
কালোজিরা তেল ব্যবহার করতে হবে। বিশেষভাবে হার্টের রোগীদের প্রতিদিন সকালে এক চামচ
কালোজিরা তেল এবং এক কাপ দুধ একসাথে মিশিয়ে খেতে হবে। আর কালোজিরা তেল প্রতিদিন
বুকে মালিশ করতে হবে। এটা করলে যেকোনো হার্টের রোগী হার্ট সমস্যা থেকে অতি দ্রুত
মুক্তি লাভ করবে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে
কালোজিরা উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপ এর মধ্যে
ভারসাম্য রক্ষা করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে কখনো ব্লাড প্রেসার হাই হবে না, আবার লোও হবে না। এককথায়, ব্লাড প্রেসার
সবসময় স্বাভাবিক থাকবে। সুতরাং কালোজিরার দ্বারা ব্লাড
প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু ও এক চামচ কালোজিরার তেল
মিশিয়ে খান। নিয়মিত এই মিশ্রণ খেয়ে যান। সব সময় ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে
থাকবে।
শ্বাসকষ্ট নিরাময় করে
শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীদের কালোজিরা খাওয়ার বিকল্প নেই।
শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা জন্য কালোজিরা এক অসাধারণ প্রতিকার। তাই যাদের শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ আছে তারা নিয়মিত ঔষধ না খেয়ে কালোজিরা খান।
জাদুকরী ফলাফল পাবেন। এজন্য কালোজিরার তেলের সাথে দুধ মিশিয়ে খাবেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মানুষ যে কত কি খায়! কিন্তু
হাতের কাছে যে ডায়াবেটিস এর মহাঔষধ কালোজিরা তা কেউ জানে না। কালোজিরা
খেলে রক্তের সুগার কমে ও গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ থাকে। ফলের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
থাকে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাড়ি কাড়ি ঔষধ না খেয়ে কালোজিরা খান এবং
নিয়মিত ৩০ মিনিট
হাঁটুন। কখনো ডায়াবেটিস বাড়বে না।
যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে
যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে কালোজিরা অনন্য ভূমিকা পালন করে।
কালোজিরা নারী-পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই যে সমস্ত
নারী-পুরুষ যৌন শক্তিতে অক্ষম তারা নিয়মিত কালোজিরা খান। প্রতিদিন সকালে খালি
পেটে এক চামচ মধু, এক চামচ কালোজিরা ও এক চামচ মাখন খান। এটা ২/৩ সপ্তাহ
খাওয়ার ফলে যৌন শক্তি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
মায়ের দুধ বৃদ্ধি করে
মায়ের দুধ বৃদ্ধির একটা মহাষৌধ হল কালোজিরা। তাই যে
সমস্ত মায়ের বুকের দুধ কম থাকে তারা নিয়মিত কালোজিরা খাবেন। মায়ের বুকের দুধ
বাড়াতে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ কালোজিরার গুড়া দুধের সাথে মিশিয়ে
খান অথবা কালোজিরা ভর্তা করে খান অথবা প্রতিদিন সকালে এক চামচ কালোজিরা তেল ও
এক চামচ মধু খান। এক সপ্তাহ খাওয়ার পর
নিশ্চিত বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে
কালোজিরা স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরা হল একটি অ্যান্টিবায়োটিক ও এন্টিসেপটিক যা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে। তাই স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে আপনি ও আপনার শিশুকে নিয়মিত এক চামচ কালোজিরার তেল ও এক চামচ কমলার রস খান। এতে অস্বাভাবিকভাবে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং মেধা বিকাশ হবে।
ওজন কমায়
ওজন বৃদ্ধি বর্তমান সময় একটি বড় সমস্যা। বাড়তি ওজনের
জন্য বর্তমানে মানুষ কত কি খায়, কত প্রকার ব্যায়াম করে তার কোনো শেষ নেই। কিন্তু
কালোজিরার মধ্যে যে লুকিয়ে আছে ওজন কমানোর বড় উপাদান তা অনেকে জানে না। তাই
বাড়তি ওজনের জন্য নিয়মিত সকালে খালি পেটে এক চামচ কালোজিরা তেল অথবা এক চামচ
কালোজিরা সাথে এক চামচ মধু
মিশিয়ে খান। ওজন কমবে খুব দ্রুত।
চুল পড়া বন্ধ করে
কালোজিরার একটি অন্যতম কাজ হল চুল পড়া বন্ধ করা। বেশিরভাগ মানুষ চুলপড়া সমস্যা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকে। অথচ নিয়মিত কালোজিরা খেলে অকালে চুল পাকা বা চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। চুল পড়া বন্ধ করতে চুলের গোড়ায় নিয়মিত কালোজিরা তেল মালিশ করুন। এতে চুলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি পাবে এবং চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
পড়তে পারেনঃ
কালোজিরার আরো কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা
উপরোক্ত কাজগুলো ছাড়া কালোজিরা আরো কিছু উল্লেখযোগ্য
কাজ করে থাকে। এখন সেগুলো একবার দেখা যাক।
১। সারা জীবন তারুণ্য ধরে রাখে।
২। সর্দি কাশি ও জ্বর সারায়।
৩। যেকোন প্রকার ব্যথা উপশম করে।
৩। শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটায়।
৫। জন্ডিস ভালো করে।
৬। ত্বক সুন্দর করে।
৭। অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করে।
৮। অর্শ রোগ ভাল করে।
৯। চর্ম রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
১০। ভালো ঘুম আনে।
১১। হজমের সমস্যা দূর করে।
১২। দেহের উন্নতি সাধন করে।
১৩। গ্যাস্ট্রিক দূর করে।
১৪। মাইগ্রেন সমস্যা সমাধান করে।
১৫। কৃমি দূর করে।
১৬। শরীরের কোষ বৃদ্ধি করে।
১৭। লিভার ভালো রাখে।
১৮। রুচি বাড়ায়।
১৯। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
২০। স্ট্রোকের ঝূকি কমায়।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। নিচে কালোজিরা
খাওয়ার উপায় গুলো দেখে নিন।
১। সকালে খালি পেটে এক চামচ কালোজিরা ও এক চামচ মধু খান অথবা এক চামচ কালোজিরার তেল ও এক চামচ মধু খান।
২। কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সাথে খান।
৩। রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ কালোজিরার তেল ও এক কাপ দুধ খান।
৪। রাতে ঘুমানোর আধা ঘণ্টা আগে এক চামচ কালোজিরার গুঁড়ো ও ১০০ গ্রাম টক দই ২৫০ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে খান।
আলোচনা শেষ প্রান্তে বলা যায় যে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের প্রতিকার যে কালোজিরার মধ্যে বিদ্যমান এটা মুখের কথা নয় বরং পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত। তাই কালোজিরার উপকারিতা অবহেলা না করে নিয়মিত কালোজিরা খান, মারাত্মক মারাত্মক রোগ থেকে দূরে থাকুন এবং সুস্থভাবে জীবন যাপন করুন।
রিলেটেড পোস্টসঃ