Type Here to Get Search Results !

অব্যর্থ ওজন কমানোর উপায় যা নেটে খুঁজেও পাবেন না

ওজন কমানোর উপায়,মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়,৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়,7 dine ojon komanor upay,ojon komanor upay

বর্তমানে সব বয়সী মানুষের মধ্যে ওজন বৃদ্ধি একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। অতিরিক্ত ওজনের কারণে মানুষ হঠাৎ করেই স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক করে। তাই বাড়তি ওজন কমানোর জন্য অনেকেই গুগল কিংবা ইউটিউবে সহজেই ওজন কমানোর উপায় খোঁজেন। ঐ সমস্ত মোটা মানুষের জন্য আজকের আমার এই আর্টিকেলটি লেখা। এখানে আমি এমন কিছু কার্যকরী উপায় তুলে ধরেছি যেগুলো অনুসরণ করলে আপনারা একটি মাসের মধ্যে ১০-১৫ কেজি ওজন কমাতে পারবেন। চলুন তাহলে এখন ওজন কমানো সেই কার্যকরী উপায়গুলো জানা যাক।

ওজন কমানোর উপায়

ওজন কমানোর উপায় জানার আগে চলুন প্রথমে জেনে নেই ওজন কেন বাড়ে।

ওজন বৃদ্ধির কারণ

১। অলস জীবনযাপন।

২। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়া।

৩। অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া।

৪। অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া।

৫। বাড়তি ক্যালোরি গ্রহণ।

৬। বেশি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য খাওয়া।

৭। চর্বি জাতীয় খাদ্য বেশি খাওয়া।

৮। অ্যালকোহল, এনার্জি, হেলথ ড্রিংকস ও কোমল পানীয় খাওয়া।

৯। খুদা লাগলেই ফাস্ট ফুড খাওয়া।

১০। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ‍্য ও শাকসবজি কম খাওয়া।

১১। লেপটিন হরমোনের ঘাটতি বা আধিক্য।

১২। টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়া।

১৩। অ্যান্ড্রোক্রাইন ও হরমোনজনিত রোগ থাকা।

১৪। বিভিন্ন ঔষধ সেবন।

১৫। জেনেটিক বা বংশগত কারণ।

ওজন বাড়লে কি কি সমস্যা হয়?

ওজন কেন বাড়ে বা ওজন বাড়ার কারণ কি তা আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি। এখন আমরা জানবো ওজন বাড়লে মানব শরীরে কি কি সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে এখন ওজন বাড়ার ফলাফল বা ক্ষতিকর দিকগুলো দেখুন।

১। রক্তে কোলেস্টেরলের ও ট্রাইগ্লিসারাইড পরিমান বৃদ্ধি পায়।

২। ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়।

৩। টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়।

৪। উচ্চ রক্ত চাপ বা হাইপার টেনশন দেখা দেয়।

৫। অতিরিক্ত ওজন হরমোনগত ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।

৬। করোনারি আর্টারি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৭। প্রোস্টেট, কোলন, জরায়ু ও মূত্রাশয় ক‍্যান্সার হতে পারে।

৮। মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৯। স্লীপ এপনিয়া ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়।

১০। দৈনন্দিন চলাফেরায় প্রচন্ড সমস্যা হয়।

১১। হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও মাথার রক্তনালী বন্ধ হয়ে হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে।

১২। জয়েন্টে ফ্লুয়িড জমে যেতে পারে এবং পরবর্তীতে অস্হিসন্ধি শক্ত হয়ে যেতে পারে।

১৩। হাড়ের সন্ধিস্থল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অস্টিওআর্থ্রাইটিসনামক রোগ দেখা দেয়।

১৪। বেশি মাত্রায় মেরুদণ্ড, কোমর ও হাঁটুতে ব্যথা বা প্রদাহ দেখা দেয়।

১৫। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

১৬। স্মৃতি শক্তি নষ্ট হয়।

১৭। পিত্তথলিতে পাথর পড়তে পারে।

১৮। মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দেয়।

১৯। লিভারের কোষে চর্বি জমে যায়। ফলে সিরোসিস-জাতীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

২০‌। গেঁটেবাত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

২১। যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যায়।

২২। পুরুষের শুক্রাণু কমে যেতে পারে।

২৩। নারীদের ঋতুস্রাবেও অনিয়ম দেখা দিতে পারে।

২৪। অনেক নারীর উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়।

২৫। সর্বোপরি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়।

পড়তে পারেনঃ

বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী পুরুষ ও নারীর সঠিক ওজন

উচ্চতার উপর ভিত্তি করে প্রত্যেক মানুষের একটি সঠিক ওজন আছে। কারো ওজন যদি উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক থাকে তাহলে সে নিশ্চিত একজন সুস্থ মানুষ। আর যদি উচ্চতা অনুযায়ী কার ওজন কম-বেশি থাকে তাহলে তার শরীরে যে কোন সমস্যা আছে।

কোন মানুষের ওজনকে (কিলোগ্রাম) উচ্চতার (মিটার) বর্গফল দিয়ে ভাগ করা হয়। আর এই ভাগফলকে বিএমআই বলে। কারো বিএমআই ১৮ থেকে ২৪ এর মধ্যে হলে স্বাভাবিক, ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে হলে স্বাস্থবান বা সামান্য মোটা, ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে হলে বেশি মোটা, আর ৩৫ এর উপরে হলে অস্বাভাবিক মোটা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

এখন বিএমআই হিসাবে আপনার ওজন বেশি, নাকি কম, নাকি সঠিক আছে সেটা জানার জন্য নিচের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন চার্টটি দেখুন।

উচ্চতা

পুরুষ (কেজি )

নারী (কেজি )

৪ ফুট ৭ ইঞ্চি

৩৯-৪৯

৩৬-৪৬

৪ ফুট ৮ ইঞ্চি

৪১-৫০

৩৮-৪৮

৪ ফুট ৯ ইঞ্চি

৪২-৫২

৩৯-৫০

৪ ফুট ১০ ইঞ্চি

৪৪-৫৪

৪১-৫৩

৪ ফুট ১১ ইঞ্চি

৪৫-৫৬

৪৩-৫৩

৫ ফুট ০ ইঞ্চি

৪৭-৫৮

৪৩-৫৫

৫ ফুট ১ ইঞ্চি

৪৮-৬০

৪৫-৫৭

৫ ফুট ২ ইঞ্চি

৫০-৬২

৪৬-৫৯

৫ ফুট ৩ ইঞ্চি

৫১-৬৪

৪৮-৬১

৫ ফুট ৪ ইঞ্চি

৫৩-৬৬

৪৯-৬৩

৫ ফুট ৫ ইঞ্চি

৫৫-৬৮

৫০-৬৫

৫ ফুট ৬ ইঞ্চি

৫৬-৭০

৫৩-৬৭

৫ ফুট ৭ ইঞ্চি

৫৮-৭২

৫৪-৬৯

৫ ফুট ৮ ইঞ্চি

৬০-৭৪

৫৬-৭১

৫ ফুট ৯ ইঞ্চি

৬২-৭৬

৫৭-৭২

৫ ফুট ১০ ইঞ্চি

৬৪-৭৯

৫৯-৭৫

৫ ফুট ১১ ইঞ্চি

৬৫-৮১

৬১-৭৭

৬ ফুট ০ ইঞ্চি

৬৭-৮৩

৬৩-৮০

৬ ফুট ১ ইঞ্চি

৬৯-৮৬

৬৫-৮৩

দ্রুত ওজন কমানোর উপায়

ওজন কমানোর জন‍্য প্রথমে পরিকল্পনা করতে হবে। তারপর ধৈর্য সহকারে ওজন কমানোর সেরা উপায়গুলো অনুসরণ করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওজন কমানোর সেরা উপায়গুলো মেনে যে কেউ দ্রত ওজন কমাতে পারে।

আমি এখন ওজন কমানোর সেরা কিছু উপায় তুলে ধরবো। আপনি চাইলে এগুলো ফলো করে অতি সহজেই আপনার অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারেন। আসুন তাহলে ওজন কমানোর সেরা উপায়গুলো দেখে নেওয়া যাক।

১। পেট খালি রেখে পরিমিত খাদ্য খান। কখনও গলায় গলায় খাবেন না।

২। কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য খাবার গ্রহণ করুন।

৩। ফাস্ট ফুড-জাতীয় খাদ্য সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন।

৪। বাড়ির বাইরের খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে বাড়ির তৈরি খাদ্য সাথে রাখুন।

৫। ভাত কম খেয়ে ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খান।

৬। খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাদ্য রাখুন।

৭। চিনি, শর্করা বা মিষ্টিজাতীয় খাদ‍্যকে না বলুন।

৮। প্রতিদিন কমবেশি পরিশ্রম করুন।

৯। লিফটে না চড়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠুন।

১০। অল্প দূরত্বে গাড়ি বা রিকশায় না চড়ে হেটে যান।

১১। বেশি বেশি পানি পান করুন।

১২। চিনি ছাড়া কফি ও গ্রিন টি পান করুন।

১৩। তরল ক‍্যালোরি এড়িয়ে চলুন।

১৪। প্রক্রিয়াজাত খাদ‍্য খাওয়া বাদ দিন।

১৫। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাদ্য পরিহার করুন।

১৬। চর্বিজাতীয় খাদ্যের পরিবর্তে নারিকেল তেল ব‍্যবহার করুন।

১৭। বেশি বেশি ডিম খান।

১৮। চর্বিযুক্ত মাছ খান।

১৯। মসলাযুক্ত খাদ্য খান। মিষ্টির পরিবর্তে বেশি করে ঝাল খান।

২০। ফাইবারযুক্ত খাদ্য খান।

২১। জাঙ্ক ফুড ও চর্বিযুক্ত খাদ্যের প্রতি আসক্তি কমান।

২২। প্রোটিনযুক্ত খাদ্য খান।

২৩। সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান।

২৪। নিয়মিত ব‍্যায়াম করুন।

২৫। লাইফস্টাইল পরিবর্তন করুন।

২৬। দৈনিক ৩০ মিনিট হাটুন। কমপক্ষে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাটুন।

২৭। মোবাইলে কথা বলার সময় বসে কথা না বলে হাটুন এবং কথা বলুন।

২৮। বিনা প্রয়োজনে রাত জাগা বন্ধ করুন।

২৯। দিনে ঘুমানোর অভ‍্যাস বাদ দিন এবং রাত ১০টার পর মোবাইলসহ সব ডিভাইস বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ুন।

৩০। দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান।

উপসংহার হিসেবে বলা যেতে পারে যে, শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য প্রথমে খাদ‍্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে। এরপর আপনি যদি এই আর্টিকেলের ওজন কমানোর উপায় গুলো কঠোরভাবে মেনে চলেন তাহলে এক মাসের মধ্যে আপনি নিশ্চিত ১০-১৫ কেজি ওজন কমাতে সক্ষম হবেন, ইনশাল্লাহ। উল্লেখ্য শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেললে আপনি স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক সহ অন্যান্য মারাত্মক রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবেন। তাই সময় নষ্ট না করে আজই ওজন কমানোর উপায় গুলো ফলো করা শুরু করে দিন। এবিষয়ে কোনকিছু জানার থাকলে তা কমেন্টে শেয়ার করুন।

রিলেটেড পোস্টসঃ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.