ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস নামক এক ধরণের মশার কামড়ের
মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে বর্ষাকালে এবং এর পরের সময়টায় ডেঙ্গুর প্রকোপ
বেশি দেখা যায়। যাইহোক, ডেঙ্গু রোগের প্রধান লক্ষণ হল জ্বর। কিন্তু এ জ্বর সাধারণ
জ্বর থেকে আলাদা। জ্বরের পাশাপাশি এ রোগের অন্যান্য স্বতন্ত্র লক্ষণ আছে যা সাধারণ
জ্বরে থাকে না। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন আপনার জ্বর ডেঙ্গু জ্বর কিনা? হ্যা, ডেঙ্গু রোগের
বিশেষ লক্ষণ এর সাথে আপনার রোগের লক্ষণ মেলাতে হবে। তবেই নিশ্চিত হতে পারবেন আপনার
জ্বর ডেঙ্গু জ্বর কিনা। এই আর্টিকেলে ডেঙ্গু রোগের বিশেষ লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। আপনার জ্বর ডেঙ্গু জ্বর কিনা তা নিশ্চিত হতে আপনি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ এর সাথে এখনই
আপনার লক্ষণ মিলিয়ে নিন। ভুলে গেলে চলবে না যে ডেঙ্গু এক নীরব ঘাতক। তাই একে আদৌ অবহেলা
করা উচিত না। চলুন এখন ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলো জেনে নেই।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। ডেঙ্গু রোগের সাধারণ লক্ষণ ও ডেঙ্গু রোগের মারাত্মক লক্ষণ। এখন প্রথমে ডেঙ্গু রোগের সাধারণ লক্ষণ গুলো জেনে নিন।
ডেঙ্গু রোগের সাধারণ লক্ষণ
- তীব্র জ্বর ও সমস্ত শরীরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত
হয়। জ্বরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে।
- পেটে তীব্র ব্যথা হয়।
- শরীরের মধ্যে বিশেষভাবে হাড়, কোমর,
পিঠ, অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে
প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
- মাথা ব্যাথা করে এবং চোখের পিছনে ব্যথা হয়।
- জ্বর আসাৱ ৪/৫ দিনের মধ্যে সমস্ত শরীরজুড়ে
লালচে ঘামাচির মত দেখা যায়। একে বলে স্কিন রাশ
- বমি বমি ভাব হয়। অনেক সময় বমিও হতে পারে।
- ক্লান্তি বোধ হয় এবং রুচি
কমে যায়।
- ৪/৫ দিন জ্বর থাকার পর ঐ জ্বর এমনিতেই
সেরে যায়। কোন কোন ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের ক্ষেত্রে দুই ২/৩ পরে আবার
জ্বর আসতে পারে।
এই লক্ষণগুলি যদি কারো মধ্যে দেখা যায় তাহলে সে নিশ্চিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আর এখন তার একমাত্র উপায় হল বিশ্রাম এবং বেশি বেশি পানি পান করা।
ডেঙ্গু রোগের মারাত্মক লক্ষণ
ডেঙ্গু আক্রান্ত কোন রোগীর মধ্যে ডেঙ্গু রোগের মারাত্মক
লক্ষণ দেখা দিলে ঐ রোগীকে কোনক্রমে বাড়িতে রাখা যাবে না। তাকে অবশ্যই হাসপাতালে
ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হবে। এখন ডেঙ্গু রোগের মারাত্মক লক্ষণ গুলি জেনে নিন।
- ডেঙ্গু রোগের সাধারণ লক্ষণ এর পাশাপাশি শরীরের
বিভিন্ন অংশ যেমন চামড়া, নাক, মুখ, দাঁত, মাড়ি ও পায়খানা দিয়ে রক্ত পড়ে।
- বমির সাথে রক্ত উঠে।
- পায়খানা কালো হয়।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে অসময় ঋতুস্রাব হয় এবং অনেকদিন
পর্যন্ত রক্ত ঝরে।
- অনেক সময় বুকে ও পেটে পানি জমে যায়।
- কোন কোন ক্ষেত্রে লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস
হয় এবং কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেলিওর দেখা যায়।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর এই অবস্থাকে বলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর। কোন ডেঙ্গু রোগীর এই অবস্থা দেখা দিলে তাকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।
পড়তে পারেনঃ
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের পরে ডেঙ্গু রোগের সবচেয়ে
মারাত্মক পর্যায়ে হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। মূলত ডেঙ্গু হেমোরেজিক জোরের সাথে
সার্কুলেটরি ফেইলিওর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম পর্যায়ে আসে। এখন ডেঙ্গু শক
সিনড্রোম পর্যায়ের মারাত্মক লক্ষণগুলি জানা যাক।
- শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিংবা সমস্ত শরীর
ঠান্ডা হয়ে যায়।
- নাড়ির স্পন্দন খুব ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
- হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে যায়।
- প্রস্রাব কমে যায়।
- যেকোনো সময় রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মৃত্যুবরণ
করতে পারে।
ডেঙ্গু হলে করণীয়
ডেঙ্গু রোগ হলে রোগীকে বাসায় না রেখে হাসপাতালে নেওয়া উত্তম। বাসায় থাকা অবস্হায় রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস ও খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। আর জ্বর কমানোর জন্য ৪ ঘন্টা পরপর প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীর যদি লিভার, হার্ট ও কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে প্যারাসিটামল খাওয়ানোর পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাড়িতে কিভাবে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিবেন
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো যদি কারো মধ্যে দেখা যায় তাহলে সে
নিশ্চিত ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত। আর করোনাভাইরাস এর মত ডেঙ্গু ভাইরাসের এ পর্যন্ত
কোনো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। তাই যদি কেউ ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত হয় তবে তাকে
প্রথম দেখতে হবে তার ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলো কোন পর্যায়ে আছে। যদি লক্ষণগুলো
সাধারন পর্যায়ে থাকে তাহলে বাড়িতে চিকিৎসা নিতে হবে। আর যদি লক্ষণগুলো মারাত্মক
পর্যায়ে যায় তাহলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
এখন জানা যাক বাড়িতে কিভাবে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিবেন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
- স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি তরল খাবার খান।
- ডাবের পানি পান করুন।
- দুধ, বালি, গ্লুকোজ,
হরলিক্স ও বাসায় তৈরি স্যুপ খান।
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার
Prevention is better than cure অর্থাৎ প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ উত্তম। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের কোন প্রতিকার আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এ রোগ থেকে বাঁচার একটাই পথ আছে। আর সেটা হল প্রতিরোধ। এক কথায়, ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচতে ডেঙ্গু মশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কোনভাবেই যেন ডেঙ্গু মশা বাড়ির আশেপাশে বংশবিস্তার না করতে পারে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।
এজন্য বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। বাড়ির আশেপাশে কোন পুরাতন পাত্রে পানি জমে থাকলে তা ফেলে দিতে হবে। বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড় থাকলে তা কেটে পরিষ্কার করতে হবে। এককথায়, বাড়ির চারপাশ নিট এন্ড ক্লিন রাখতে হবে। তাহলে ডেঙ্গু মশা আর বংশ বিস্তার করতে পারবে না এবং আপনাকেও কামড়াবে না। ফলে আপনিও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হবেন না। তবে আপনি যদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এলাকার মানুষ হন তাহলে সকালে ও সন্ধ্যায় মশারির মধ্যে থাকবেন। না হলে আপনার বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলেও পাশের বাড়ি থেকে ডেঙ্গু মশা এসে আপনাকে কামড়িয়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত করে দিবে।
পরিশেষে ডেঙ্গু একটি মারাত্মক রোগ। তবে সচেতনতা ও সতর্কতা
মেনে চললে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। মশার কামড় এড়ানো, আশেপাশের পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন
রাখা এবং ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াই ডেঙ্গু মোকাবিলার মূল
উপায়। দেরি না করে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই
নিজে সতর্ক থাকুন, অন্যদের সচেতন করুন এবং ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পান। মনে রাখবেন-
সচেতনতাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের একমাত্র চাবিকাঠি।
রিলেটেড পোস্টসঃ