নামাজ বেহেস্তের চাবি। পবিত্র কোরআনে ৮২ জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন নামাজ পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। এজন্য প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর নামাজ পড়া
বাধ্যতামূলক। এই নামাজ কিভাবে পড়তে হয় এবং কোন ওয়াক্তে কয় রাকাত নামাজ পড়তে হয়
তা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) তার উম্মতদেরকে সুন্দরভাবে শিখিয়ে দিয়েছেন।
আজ আমি এই আর্টিকেলে ফজরের নামাজ কয় রাকাত সহ ফজরের নামাজের নিয়ম ও
নিয়ত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি নামাজ পড়া শিখতে চাইলে এই আর্টিকেলটি
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন।
ফজরের নামাজ কয় রাকাত
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর দৈনিক
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাঃ কোন ওয়াক্তে কয়
রাকাত নামাজ পড়তে হয় তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের এক ওয়াক্ত
হল ফজর। ফজরের ওয়াক্তে নামাজ পড়লে সারারাত ইবাদত করার সোওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহর হুকুম
ও রাসল সাঃ এর নির্দেশ মোতাবেক ফজরের নামাজ চার রাকাত। দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত
ফরজ। প্রথমে সুন্নত দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। এরপর ফরজ দুই রাকাত পড়তে হয়। এখন চলুন
ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম জেনে নেয়া যাক।
ফজরের নামাজের নিয়ম
নামাজ শুধুমাত্র পড়লেই হয় না। মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে
দুই রাকাত নামাজ কবুল হওয়া খুব কঠিন। মন ঠিক না করে নামাজ পড়লে সে নামাজ কখনো কবুল
হয় না। সারা জীবন নামাজ পড়লেও মৃত্যুর পর অনেকের আমলনামায় এক রাকাত নামাজও খুঁজে
পাওয়া যাবে না। তাই নামাজ পড়ার জন্য আগে মন ঠিক করতে হবে এবং ঈমানের সহিত নামাজ পড়তে
হবে। আসুন এখন ফজরের চার রাকাত নামাজ পড়ার নিয়ম শিখে নেই।
ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ম
১। জায়নামাজ বিছিয়ে নিন এবং জায়নামাজের দোয়া পড়ুন।
২। ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত করুন। নিয়ত আরবিতে
না পারলে বাংলায় পড়ুন- আমি কিবলা মুখী হইয়া ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়িতেছি।
৩। আল্লাহু আকবার বলে পুরুষরা কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠিয়ে
এবং মহিলারা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠিয়ে বুকে হাত বাধুন। পুরুষরা নাভির নিচে হাত বাঁধবেন
এবং মহিলারা নাভির উপরে হাত বাঁধবেন।
৪। ছানা পড়ুন।
৫। আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম পড়ুন।
৬। মনে মনে সূরা ফাতিহা পড়ুন এবং সাথে যেকোনো একটি সূরা পড়ুন।
৭। আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান এবং তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল
আজিম পড়ুন।
৮। সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলতে বলতে রুকু থেকে উঠুন এবং
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে রব্বানা লাকাল হামদ পড়ুন।
৯। আল্লাহু আকবার বলে সেজদায় যান এবং সেজদা অবস্থায় তিনবার
সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ুন।
১০। সেজদা থেকে উঠে সামান্য বসুন। এরপর আবার সেজদায় যান এবং
তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ুন।
১১। সেজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবার বুকে হাত বাঁধুন।
১২। বিসমিল্লাহ সহ মনে মনে সূরা ফাতিহা পড়ুন এবং সাথে আরেকটি
সূরা পড়ুন।
১৩। আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান এবং তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল
আজিম পড়ুন।
১৪। সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলতে বলতে রুকু থেকে উঠুন
এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়ুন।
১৫। আল্লাহু আকবার বলে সেজদায় যান এবং তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল
আলা পড়ুন
১৬। সেজদা থেকে উঠে সামান্য বসুন। এরপর আবার সেজদায় যান এবং
তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ুন।
১৭। সেজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসুন এবং আত্তাহিয়াতু বা তাশাহুদ,
দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ুন।
১৮। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ বলে ডান দিকে সালাম
ফেরান এবং একই কথা বলে বাম দিকে সালাম ফেরান।
১৯। তওবা পড়ুন।
২০। মোনাজাত করুন।
পড়তে পারেনঃ
- সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত
- তারাবির নামাজের নিয়ম ও দোয়া
- সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ ফজিলত
ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম
১। তাকবীর দিন।
২। ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত করুন। নিয়ত আরবিতে
না পারলে বাংলায় বলুন- আমি কিবরামুখী হইয়া ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ পড়িতেছি।
৩। আল্লাহু আকবার বলে বুকে হাত বাধুন।
৪। আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম পড়ুন।
৫। শব্দ করে সূরা ফাতিহা পড়ুন এবং সাথে যেকোনো একটি সূরা
পড়ুন।
৬। আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান এবং তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল
আজিম পড়ুন।
৭। সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলতে বলতে রুকু থেকে উঠুন এবং
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে রব্বানা লাকাল হামদ পড়ুন।
৮। আল্লাহু আকবার বলে সেজদায় যান এবং সেজদা অবস্থায় তিনবার
সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ুন।
৯। সেজদা থেকে উঠে সামান্য বসুন। এরপর আবার সেজদায় যান এবং
তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ুন।
১০। সেজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবার বুকে হাত বাঁধুন।
১১। বিসমিল্লাহ সহ শব্দ করে সূরা ফাতিহা পড়ুন এবং সাথে আরেকটি
সূরা পড়ুন।
১২। আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান এবং তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল
আজিম পড়ুন।
১৩। সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলতে বলতে রুকু থেকে উঠুন
এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়ুন।
১৪। আল্লাহু আকবার বলে সেজদায় যান এবং তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল
আলা পড়ুন।
১৫। সেজদা থেকে উঠে সামান্য বসুন। এরপর আবার সেজদায় যান এবং
তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ুন।
১৬। সেজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসুন এবং আত্তাহিয়াতু বা তাশাহুদ,
দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ুন।
১৭। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ বলে ডান দিকে সালাম
ফেরান এবং একইভাবে বাম দিকে সালাম ফেরান।
১৮। তওবা পড়ুন এবং মোনাজাত করুন।
ফজরের নামাজের নিয়ত
ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকাতাই সালাতিল
ফাজরি সুন্নতু রাসুলুল্লাহি তায়ালা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি
আল্লাহু আকবার।
ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকাতাই সালাতিল
ফাজরি ফারদুল্লাহি তায়ালা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু
আকবার।
ফজরের নামাজ সংক্রান্ত আরো অজানা প্রশ্ন উত্তর:
ফজরের নামাজ আগে সুন্নত না ফরজ?
ফজরের নামাজ চার রাকাত। দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ।
কিন্তু অনেকে জানে না সুন্নত আগে পড়তে হয়, না ফরজ আগে পড়তে হয়। আসলে, ফজরের নামাজে
সুন্নত আগে পড়তে হয়। তারপর ফরজ পড়তে হয়।
ফজরের নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়?
ফজরের নামাজের মধ্যে সূরা ফাতিয়াসহ যে কোন সূরা পড়া যায়।
কিন্তু ফজরের নামাজের পর যে সূরা পড়া হোক না কেন তা অতিরিক্ত আমল বলে গণ্য হয়। তবে
কোরআন ও হাদিসের আলোকে ফজরের নামাজের পর আয়াতুল কুরসি, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত,
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত, বিসমিল্লাহসহ তিনবার সূরা এখলাস ও দুরুদ শরীফ পড়লে অনেক
ফায়দা হয়।
ফজরের নামাজের উপকারিতা
ফজরের নামাজের উপকারিতা অনেক। ফজরের নামাজ পড়লে সারাদিন আল্লাহর
জিম্মায় থাকা যায়। ফজরের নামাজ পড়লে সে কখনও জাহান্নামে যাবে না। ফজরের নামাজ আদায়কারীর
জন্য আছে কিয়ামতের দিন নূরের সুসংবাদ। ফজরের নামাজ আদায় করলে সারারাত ইবাদত করার
সওয়াব পাওয়া যায়। ফজরের নামাজ পড়লে মুনাফিকের তালিকা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
ফজরের নামাজ দুনিয়ার সবকিছু থেকে উত্তম। পরিশেষে, ফজরের নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যায়াম।
ফজরের নামাজ কয়টা পর্যন্ত পড়া যায়?
প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। ঠিক তেমনি
ফজরের নামাজেরও একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। ফজরের নামাজের সময় হল সুবহে সাদিকের পর থেকে
সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবশ্যই ফজরের নামাজ আদায় করতে
হবে। এখন ফজরের নামাজ কয়টা পর্যন্ত এটা জানতে আপনাকে সূর্যোদয়ের সময় ঘড়ি দেখতে
হবে। তাহলে আপনি জানতে পারবেন ফজরের নামাজ কয়টা পর্যন্ত। কেননা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের
পূর্ব পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময় আজীবন ঠিক থাকবে কিন্তু প্রত্যেকদিন ঘড়িতে ফজরের
নামাজের সময় পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাই ফজরের নামাজ কয়টা পর্যন্ত এটা বলা আদৌ সম্ভব
না।
উপসংহারে বলা যায় যে নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই নামাজ
ছাড়া পরকালে কারো মুক্তি নেই। যে কারণে সবাইকে নামাজ পড়া শিখতে হবে এবং কোন ওয়াক্তে
কয় রাকাত নামাজ তা জানতে হবে। আজকে আমার এই আর্টিকেল থেকে আমার মনে হয় আপনি ফজরের
নামাজ কয় রাকাত সহ ফজরের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত
জানতে পেরেছেন। এরকম আরও সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল পড়তে আমার ব্লগ সাইটের সাথেই থাকুন।
রিলেটেড পোস্টসঃ
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক অজানাকে জানতে নিয়মিত আমার ব্লগ সাইটটি পরিদর্শন করুন। আমার ব্লগ সাইটটি পরিদর্শনের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।