ইফতারের দোয়া
Iftar er dua
পবিত্র রমজান মাসে সারা বিশ্বের মুসলমানরা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হিসাবে ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখে। আর এই রোজা প্রতিদিন সন্ধ্যায় ইফতারের মাধ্যমে ভাঙ্গা হয়। ইফতারে খাবার খাওয়া ছাড়াও ইসলামে ইফতারের ফলিলত অনেক। ইফতার রোজাদারদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক তৈরি বন্ধন করে এবং একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও উদারত প্রকাশ শেখায়। এছাড়া কোরআন ও হাদিসে অন্যকে ইফতার করানোর বিশেষ ফজিলত উল্লেখ আছে। আজ আমি এই আর্টিকেলে ইফতারের দোয়া ও ইফতারের সময় সহ অন্যকে ইফতার করানোর ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তাই ইফতার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ইফতার
Iftar
ইফতার একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ খাদ্য গ্রহণ বা পানাহার করা। সারাদিন রোজা থেকে সূর্যাস্তের পর সন্ধ্যায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে রোজাদার ব্যক্তির খাদ্য গ্রহণ বা পানাহার করাকে ইফতার বলে। আর যে খাদ্য বস্তু দ্বারা রোজাদার ব্যক্তি রোজা ভাঙ্গে তাকে ইফতারি বলে। মনে রাখবেন ইফতার ও ইফতারি কিন্তু এক নয়। ইফতার মানে খাদ্য গ্রহণ বা পানাহার করা এবং ইফতারি মানে খাদ্য বস্তু। যেকোন হালাল খাদ্য বস্তু দ্বারা ইফতার করা যায়। তবে খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ
(সা:) নিজেও রমজান মাসে ইফতার করতেন। তিনি খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করতেন। এরপর
তিনি পানি পান করতেন এবং হালকা খাবার খেতেন। ইফতারের পর তিনি সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে
যেতেন।
ইফতার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ
(সা:) বলেছেন, “রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। একটি ইফতারের সময় আর অপরটি আল্লাহর সঙ্গে
সাক্ষাতের সময়।” (মুসলিম)
ইফতার সম্পর্কে মহান
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয় যারা দ্রুত
ইফতার করে।” সুতরাং নির্দিষ্ট সময়ে বা ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথেই ইফতার করা উত্তম।
তাই আমরা এখন ইফতারের সময় সম্পর্কে জানবো।
ইফতারের সময়
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইফতারের সময় জানা খুব সহজ। ইফতারের ক্যালেন্ডার
ও মসজিদের সংকেত ছাড়াও ইন্টারনেট কানেকশন সহ একটি Android ফোন হাতে থাকলে এক ক্লিকে বিশ্বের
যেকোন এলাকার ইফতারের সময় জানা যায়। তবে ইসলামের পরিভাষায় সূর্যের পুরো বৃত্ত অদৃশ্য
হওয়ার সাথে সাথে বা মাগরিবের নামাজের পূর্ব মূহুর্তকে ইফতারের সময় বলা হয়। ইফতারের
নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে কোন ক্রমেই ইফতার করা যাবে না কারণ মহানবী (সা:) একদল লোককে
(স্বপ্নে) দেখলেন যে তারা তাদের পায়ের গোড়ালির উপর মোটা শিরায় (বাঁধা অবস্থায়) লটকানো
আছে। তাদের কশগুলো কেটে ও ছিঁড়ে আছে এবং কশ বেয়ে রক্তও ঝরছে। নবী (সা:) বলেন, আমি বললাম,
“ওরা কারা?’ তারা বললেন, “ওরা হল তারা যারা সময় হওয়ার পূর্বেই ইফতার করে নিত।” রাসূল
(সা:) এর এই হাদিস অনুযায়ী আমাদের সকলের নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ইফতার করা থেকে বিরত থাকতে
হবে কারণ হাদিসের আলোকে রোজা থেকে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ইফতার করলে লাভের চেয়ে ক্ষতি
বেশি হবে। যাইহোক, ইফতার, ইফতারি ও ইফতারের সময় সম্পর্কে মোটামুটি জানা হল। এখন চলুন
ইফতারের দোয়া সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
পড়তে পারেনঃ
- সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ ফজিলত
- নামাজের জন্য ১০ টি সূরা ও আয়াত বাংলা উচ্চারণ
- আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
Iftar dua
ইফতারের সময় দোয়া কবুলের উত্তম সময়। তাই
এই সময় প্রত্যেক রোজাদারের বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। ইফতার সামনে নিয়ে বসে আল্লাহ
রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করলে কারো (সুদখোর, ঘুষখোর ও জেনাখোর সহ কবীরা গুনাহকারী
ছাড়া) দোয়া বিফলে যায় না। তাই নিজেকে পাপমুক্ত করতে ইফতার সামনে নিয়ে সবাই আল্লাহর
কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন।
ইফতারের আগে দোয়া
ইফতার সামনে রেখে “ইয়া ওয়াসিয়াল
ফাদ্বলি ইগফিরলি” দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দেন
এবং নিষ্পাপ বান্দা হিসেবে রমজান অতিবাহিত করার তওফিক দান করেন। এছাড়া ইফতারের কিছুক্ষণ
আগে থেকে "ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাতি, ইগফিরলী।" এই দোয়াটি বেশি বেশি
পড়বেন যার অর্থ হে মহান ক্ষমা দানকারী! আমাকে ক্ষমা করুন। তাই ইফতার সামনে নিয়ে সকল রোজাদারের এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া
উচিত।
Iftar time dua
রোজার শেষে ইফতার করা এবং ইফতারের দোয়া
পড়া সুন্নত। কিন্তু এই দোয়া আরবিতে বা বাংলায় মুখে উচ্চারণ করা বাধ্যতামূলক নয়।
তারপরেও ইফতারের দোয়া মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। তাই ইফতার করার সময় ইফতারের দোয়া মনে মনে না বলে মুখে উচ্চারণ করবেন এবং বিসমিল্লাহ বলে ইফতার করবেন।
ইফতারের দোয়া আরবি
اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِيْمِيْن
ইফতারের দোয়া বাংলা
Iftar dua Bangla
আল্লাহুম্মা ছুমতু লাকা ওয়া তাওয়াক্কালতু
আলা রিজকিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
ইফতারের দোয়া বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা
রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করছি।
ইফতার করানোর ফজিলত
কোন রোজাদার ব্যক্তিকে যদি কেউ ইফতার করায়
তাহলে ঐ রোজাদার ব্যক্তি যে পরিমাণ সওয়াব পাবেন তিনিও ঠিক সেই পরিমান সওয়াব পাবেন।
সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে আরো একটি অতিরিক্ত রোজার সওয়াব দান করবেন। সুতরাং
রোজাদার ব্যক্তিকে কোন কিছু দিয়ে ইফতার করানোর চেষ্টা করবেন। ইফতার করানোর সওয়াব
অনেক বেশি।
উপসংহারে বলা যায় যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট
না করে কোন মানুষ জান্নাতে যেতে করতে পারবে না। আর আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার একমাত্র
উপায় হলো রমজান মাসের ৩০ রোজা রাখা এবং নিজেদের মঙ্গলের জন্য প্রতি রোজার শেষে ইফতার করা ও
ইফতারের দোয়া পড়া। তাই কেউ জান্নাতে যেতে চাইলে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সহ রমজান মাসে
৩০ রোজা রাখতে হবে এবং আল্লাহর বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। মনে রাখবেন- নিয়ত গুনে বরকত।
অতএব, রোজা রাখার পূর্বে রোজার নিয়ত করতে হবে এবং রোজার শেষে ইফতারের দোয়া পড়ে ইফতার
করতে হবে এবং সামর্থ্য থাকলে অন্যকে ইফতার করাতে হবে। আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনি
ইফতারের দোয়া ও ইফতারের সময় সহ অন্যকে
ইফতার করানোর ফজিলত ভালভাবে জানতে পেরেছেন। এরকম আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে
সর্বদা আমার ব্লগ সাইটের সাথেই থাকুন।
রিলেটেড পোস্টসঃ
- রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া
- জুম্মা ও তাহাজ্জুদ সহ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়
- সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক অজানাকে জানতে নিয়মিত আমার ব্লগ সাইটটি পরিদর্শন করুন। আমার ব্লগ সাইটটি পরিদর্শনের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।