ইসলামের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজ প্রথম ওয়াক্ত। এই ফজরের নামাজ সূর্যোদয়ের আগে আদায় করা বাধ্যতামূলক। এটি দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসাবে বিবেচিত। ফজরের নামাজ আদায় করলে সারারাত ইবাদত করার সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকেই ঘুমের কারণে কিংবা ফজরের নামাজের শেষ সময় না জানার কারণে ফজরের নামাজ সময়মত পড়তে পারে না। তারা যদি ফজরের নামাজের ফজিলত জানতো তাহলে আরামের ঘুম হারাম করে দিয়ে আগে ফজরের নামাজ পড়ত। তাই আজ আমি এই আর্টিকেলে ঐ সমস্ত মুসলমানদের জন্য ফজরের নামাজের শেষ সময় সহ ফজরের নামাজের ফজিলত নিয়ে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন প্রথমে ফজরের নামাজের শেষ সময় জেনে নেই।
ফজরের নামাজের শেষ সময়
ফজরের নামাজের শেষ সময় বলতে সূর্যোদয়ের পূর্বের সময়কে বোঝায়। অবস্থান এবং ঋতুর উপর নির্ভর করে ফজরের নামাজের সময় পরিবর্তিত হয়। তবে এটি সাধারণত সূর্যোদয়ের আগে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট স্থায়ী হয়। এই সময়ে ফজরের নামাজ পড়া মুসলমানদের জন্য একটি অন্যতম পুণ্যের কাজ।
সময়মতো ফজরের নামাজ আদায় করলে অনেক আধ্যাত্মিক ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উপকার পাওয়া যায়। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে সালাত আদায় করে এবং তার অস্ত যাওয়ার পূর্বে সালাত আদায় করে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।" এই হাদিসটি উপর ভিত্তি করে বলা যায় ফজরের নামাজ যথাসময়ে আদায় করা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করার একটি উপায়।
মূলত ফজরের নামাজের শেষ সময়টি মহান বরকত ও সওয়াবের সময়। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করল, সে যেন সারা রাত নামায পড়ল।" এই হাদীস অনুযায়ী সূর্যোদয়ের আগে শেষ সময়ে জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করা সারা রাত নামাজের সওয়াব লাভের একটি উপায়।
পড়তে পারেনঃ
ফজরের নামাজের ফজিলত
ইসলামে ফজরের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। এটি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ নামাজ। মুসলমানদের জন্য এর অনেক উপকারিতা আছে।
১। ফজর নামাজ মুসলমানদেরকে আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করতে
সাহায্য করে।
২। ফজরের নামাজ নিয়মানুবর্তিতা শেখায়।
৩। অনেক বরকত ও সওয়াব পাওয়া যায়।
৪। মন্দ কাজ থেকে রক্ষা করে। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন,
"যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।"
৫। সকালে অতিরিক্ত ব্যায়ামের প্রয়োজন হয় না।
৬। ফজরের নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন
করা যায়।
৭। আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা চাওয়া ও পাওয়া যায়। নবী
মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ফজরের নামায আদায় করে সে আল্লাহর হেফাজতে
থাকে।"
৮। ফজরের নামাজ হল সারা রাত নামাজের সওয়াব লাভের মাধ্যম। নবী
মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করল সে যেন সারা
রাত নামাজ পড়ল।"
৯। ফজরের নামাজ কেয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দিবে। একটি হাদিসে
উল্লেখ আছে, "যারা রাতের আঁধারে মসজিদের দিকে হেঁটে যায় তাদেরকে কেয়ামতের
দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও।"
১০। ফজরের নামাজ সরাসরি জান্নাত প্রাপ্তি সুসংবাদ দেয়। নবী মুহাম্মাদ (সা:) বলেছেন, "যে ব্যক্তি দুই শীতল (নামাজ) পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর দুই শীতল (নামাজ) হল ফজর ও আসর।"
১১। ফজরের নামাজ পড়লে রিজিকে বরকত আসে। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন, "সকালের ঘুম ঘরে রিজিক আসতে বাঁধা দেয়। কেননা তখন রিজিক বন্টন করা হয়।"
১২। ফজরের নামাজ পড়লে দুনিয়া ও আখেরাতের সেরা বস্তু অর্জিত
হয়। হযরত মুহাম্মদ (সা:)‘বলেছেন, "ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু
আছে সবকিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।"
উপসংহারে বলা যায় যে ফজরের নামাজ ইসলামে একটি অপরিহার্য ইবাদত যার ফজিলত লিখে শেষ করা
যাবে না। তাই প্রত্যেক মুসলমানকে ফজরের
নামাজের শেষ সময় ও ফজরের নামাজের ফজিলত
জেনে সময় মত ফজরের নামাজ আদায় করা উচিত। নিয়মিত পূর্ণ ঈমানের সহিত সময় মত ফজরের নামাজ
আদায় করলে এহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পাওয়া যাবে- ইনশাআল্লাহ।
রিলেটেড পোস্টসঃ
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক অজানাকে জানতে নিয়মিত আমার ব্লগ সাইটটি পরিদর্শন করুন। আমার ব্লগ সাইটটি পরিদর্শনের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।