Type Here to Get Search Results !

জুম্মা ও তাহাজ্জুদ সহ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়

 

নামাজের সময়, ফজরের নামাজের সময়, যোহরের নামাজের সময়, আসরের নামাজের সময়, eshar namaz time,জুম্মার নামাজ,tahajjud namaz time,তাহাজ্জুদের নামাজের সময়

নামাজের সময়

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ হল নামাজ। কোরআন ও হাদিসে নামাজ পড়ার জন্য কঠোর নির্দেশ এসেছে এবং নামাজ না পড়ার জন্য কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই প্রত্যেক বয়োপ্রাপ্ত মুসলমানের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। প্রথমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে সুরা মুমিনের ৫৫ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে সকাল সন্ধ্যা দুই রাকাত নামাজ পড়ার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাসূল (সা:) কে সকাল, সন্ধ্যা ও দুপুর এই তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়ার নির্দেশ দেন। ৯১৯ খ্রিস্টাব্দে হযরত মুহাম্মদ (সা:) মেরাজে যাওয়ার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার নির্দেশ দেন এবং নামাজের সময় নির্ধারিত করে দেন। সেই থেকে প্রত্যেক বয়োপ্রাপ্ত মুসলমান নর-নারীর উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ।

কিন্তু অনেক মানুষ এই ফরজ নামাজ পড়ার জন্য গাফিলতি করে কিংবা নামাজ পড়লেও সময় জ্ঞান না রেখে বিলম্ব করে নামাজ পড়ে। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে (আওয়াল সময়) নামাজ পড়াকে তিনি খুব পছন্দ করেন। আগেকার দিনে সময় নির্ণায়ক ঘড়ির মত কোন যন্ত্র ছিল না। তাই মানুষের নামাজের সময় নির্ধারণ করা সমস্যা হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে ঘড়ি না থাকলেও প্রত্যেকের কাছে মোবাইল ফোন থাকে যার উপর টিভির পর্দার মতো সময় ভেসে থাকে। এরপরেও অনেক মানুষ নামাজের সময় সম্পর্কে বেহুশ থেকে নামাজে বিলম্ব করে। তাই আজ আমি আমার এই আর্টিকেলে ঘড়ি , মোবাইল ও নামাজের ক্যালেন্ডার বাদে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নামাজের সময় নিয়ে আলোচনা করব।

আপনি আর্টিকেলটি পড়লে ঘড়ি, মোবাইল ও নামাজের ক্যালেন্ডার ছাড়া এবং আজান শুনতে না পেয়েও নিজে নিজেই নামাজের সময় জানতে পারবেন। তাহলে চলুন এখন জুম্মা ও তাহাজ্জুতের নামাজ সহ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় জেনে নেওয়া যাক।

ফজরের নামাজের সময়

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজ একটু কঠিন। অথচ ফজরের নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। সঠিক ভাবে নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করলে সারাদিন নামাজ পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। অথচ আমাদের এমন দুর্ভাগ্য যে ইবলিশ শয়তানের কারণে অনেকের ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যায়। আর তারা সারাদিন ইবাদতের সওয়াব পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। তাই আমাদের প্রত্যেকের ফজরের নামাজ কাজা না করে নিয়মিত আদায় করা উচিত। চলুন এখন ফজরের নামাজের সময় জেনে নেই।

সুবেহ সাদিকের পর থেকে ফজরের নামাজের সময় শুরু হয়। আর সূর্য উঠার পূর্ব পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময় থাকে। অর্থাৎ সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্য উঠার পূর্বেই ফজরের নামাজ আদায় করতে হয়। সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্য উঠার পূর্ব পর্যন্ত এই সময়ের প্রথম অংশে মহিলাদের জন্য ফজরের নামাজ পড়া উত্তম এবং পুরুষদের জন্য শেষাংশে ফজরের নামাজ পড়া উত্তম।

যোহরের নামাজের সময়

মানুষ যখন কর্মে ব্যস্ত থাকে ঠিক ঐ সময় যোহরের নামাজ পড়তে হয়। অফিস-আদালত অনেক কর্মব্যস্ততার কারণে অনেক মানুষ য়োহরের নামাজ পড়ে না। অথচ এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার কোন অনুমতি নেই। দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে না পারলে বসে পড়তে হবে, বসে নামাজ পড়তে না পারলে শুয়ে পড়তে হবে, শুয়ে নামাজ পড়তে না পড়লে ইশারায় পড়তে হবে। এখানে নামাজ না পড়ার কর্মব্যস্ততার কোন অপশন নেই। সুতরাং এই সময় যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন যোহরের নামাজের সময় শুরু হওয়ার সাথে সাথে অফিস-আদালতের কর্মব্যস্ততা বাদ রেখে য়োহরের নামাজ আদায় করে নিতে হবে। চলুন এখন জোহরের নামাজের সময় জেনে নেই।

দ্বিপ্রহরের পর সূর্য পশ্চিম আকাশে একটু ঢলে পড়লেন যোহরের নামাজের সময় শুরু হয়। আর প্রত্যেক বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত য়োহরের নামাজের সময় থাকে। আপনি সহজে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে যোহরের নামাজের সময় নির্ধারণ করতে পারেন। পরীক্ষা টি হল- মাটিতে একটি কাঠি বসিয়ে রাখুন। ঐ কাঠির ছায়া দেখে যোহরের নামাজের সময় নির্ধারণ করে নিন। ঐ কাঠির ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের নামাজের সময় থাকে।

আসরের নামাজের সময়

অফিস-আদালতের কর্মব্যস্ততা শেষে মানুষ বাসায় ফিরে রেস্ট নেওয়ার পরে আসরের নামাজের সময় শুরু হয়। আসরের নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। আসরের নামাজের শেষে দোয়া করলে সে দোয়া কবুল হয়। তাই প্রত‍্যেক নামাজী ব্যক্তির আসরের নামাজের শেষে কিছু সময় দোয়া ও জিকির আজগার করা উচিত।

য়োহরের নামাজের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে আসরের নামাজের সময় শুরু হয়। এক কথায়, কোন বস্তুর ছায়া যখন তার মূল ছায়ার দ্বিগুণ হয় তখন আসরের নামাজের সময় শুরু হয়। আর সূর্যাস্ত পর্যন্ত আসরের নামাজের সময় থাকে। তবে সূর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে তখন আসরের নামাজ আদায় করলে মাকরুহ হয়ে যায়।

পড়তে পারেনঃ

মাগরিবের নামাজের সময়

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে মাগরিবের নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। মাগরিবের নামাজ শেষে বেশি বেশি করে তাওবা, দোয়া ও দুরুদ পড়ে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। তাই মাগরিবের নামাজ শেষে জায়নামাজ থেকে না উঠে কিছু সময়ের জন্য তাওবা, দোয়া, দুরুদ, তসবিহ ও জিকির-আজগার করে আল্লাহর কাছে নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়।

সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের নামাজের সময় শুরু হয়। আর পশ্চিম আকাশে যতক্ষণ পর্যন্ত লাল রঙ দেখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত মাগরিবের নামাজের সময় থাকে। তবে মাগরিবের নামাজের সময় শুরু হওয়ার সাথে সাথে নামাজ আদায় করা উচিত। মাগরিবের নামাজ বিলম্ব করে পড়লে মাকরুহ হয়ে যায়।

এশার নামাজের সময়

ফজরের নামাজের মত এশার নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। সহীহভাবে এশার নামাজ আদায় করলে সারারাত ইবাদত করার সওয়াব পাওয়া যায়। যারা ফজর ও এশার নামাজ নিয়মিত আদায় করে তারা খুব ভাগ্যবান। তারা দিনরাত ২৪ ঘন্টা ইবাদতের সওয়াব পেয়ে যান। তাই বিশেষভাবে কখনো ফজর ও এশার নামাজ কাজা করা উচিত নয়।

মাগরিবের নামাজের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে এশার নামাজের সময় শুরু হয়। আর সুবেহ সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত এশার নামাজের সময় থাকে। তবে রাতের এক-তৃতীয়াংশ বিলম্ব করে এশার নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব এবং বিনা কারণে অর্ধ রাতের পরে এশার নামাজ আদায় করা মাকরুহ।

তাহাজ্জুদের নামাজের সময়

তাহাজ্জুতের নামাজ খুব ফজিলতপূর্ণ। শেষ রাতের দিকে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ সেই দোয়া কবুল করে নিন। আসলে শেষ রাতের দিকে আল্লাহ মানুষকে গুনহা মাফ করার জন্য এবং ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহবান করেন। আর এই আহবানে সাড়া দিয়ে যদি কেউ দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তাহলে সাথে সাথে তিনি তা কবুল করে নেন। তাই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি রাতে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উচিত।

এশার নামাজ শেষেই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। তবে শেষ রাতের দিকে অর্থাৎ রাত তিনটার পর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম। ফজরের নামাজের সময় শুরু হলেই তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শেষ হয়।

জুম্মার নামাজের সময়

দুই ঈদের মতো মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন হলো জুম্মা মোবারক। ঠিক মুসলমানরা দুই ঈদের মতো নতুন পোশাক বা পরিষ্কার পোশাক পরিধান করে খুব পরিপাটি হয়ে জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে যায়। অন্যান্য দিনের তুলনায় জুম্মার নামাজের প্রতি মানুষের আকর্ষণ অনেক বেশি থাকে। এই দিনে দোয়া কবুল হয়। জুম্মার দিনে খুৎবাহর মাঝের ইমাম সাহেব যখন বিরতি নেন ঠিক ঐ সময় কোন দোয়া করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তা কবুল করে নেন। তাই প্রত্যেক মুসলমানের নিয়মিত জুম্মার নামাজ আদায় করা উচিত।

সূর্য একটু ঢলে পড়ার পর জুম্মার নামাজের সময় শুরু হয়। তবে সূর্য ঢলে পড়ার আগেও জুম্মার নামাজ পড়া যায়। আর যোহরের নামাজের সময় যতক্ষণ থাকে জুম্মার নামাজের সময়ও কতক্ষণ থাকে।

নামাজের নিষিদ্ধ সময়

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রত্যেকটা কাজের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। ঠিক তেমনি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং নামাজ পড়ার উপর নিষিদ্ধ সময় ঘোষণা করেছেন। কোনক্রমেই এই নিষিদ্ধ সময় নামাজ পড়া যাবে না। নামাজ পড়া নিষিদ্ধ সময় হল সূর্যাদয়ের সময় ও সূর্যাস্তের সময়। তাই এদুটি সময় নামাজ পড়া থেকে প্রত্যেকের বিরত থাকতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জুম্মা ও তাহাজ্জুদের নামাজ সহ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় অনুসরণ করে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে জামাতের সহিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।

রিলেটেড পোস্টসঃ

একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক অজানাকে জানতে নিয়মিত আমার ব্লগ সাইটটি পরিদর্শন করুন। আমার ব্লগ সাইটটি পরিদর্শনের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad